Thursday, November 7, 2024

বিদেশে ৮ হাজার কোটি টাকার সম্পদ, দেশে জাবেদ ‘গরিব’

আরও পড়ুন

বিদেশে বাংলাদেশি সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকার তথ্য প্রকাশিত হলেও দেশে তার মোট সম্পদ মাত্র ১৮ কোটি টাকার। আর সেই হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারকে আয়কর দিয়েছেন মাত্র ১৯ লাখ টাকা। আর এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তিনি সম্পদ দেখিয়েছেন মাত্র ১৭ কোটি টাকার। আর বছরে মোট আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৭৪ লাখ টাকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির তথ্য প্রকাশিত হলেও দেশে তার সম্পদ দেখিয়েছেন মাত্র ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৭৮ হাজার ৯৮৫ টাকা। আর সেই হিসাবে তিনি আয়কর দিয়েছেন ১৯ লাখ ২৬ হাজার ৮০৩ টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে তিনি দেশে সম্পদ দেখিয়েছেন ১৭ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ১৮১ টাকা। আর দুটি গাড়ি থাকলেও তিনি আয়কর ফাইলে একটির কথা উল্লেখ করেছেন। চট্র মেট্রো ঘ-১১-৫৩৯৩ নম্বরের গাড়িটি আয়কর ফাইলে উল্লেখ থাকলেও চট্ট মেট্রো-খ-১১-০৮৬৫ নম্বরের গাড়ির মালিকানা থাকলেও তিনি দেখাননি। আর আয়কর ফাইলে দেখানো গাড়ির দাম উল্লেখ করেছেন ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা। আয়কর নথিতে ব্যাংকের স্থিতি দেখিয়েছেন ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭২ হাজার ২৩৫ টাকা।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, সম্পদের তথ্য গোপন করে সাইফুজ্জামান চৌধুরী কর ফাঁকি দিয়েছেন। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন, দেশ থেকে অর্থ পাচার, দুর্নীতিসহ বহুমাত্রিক অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক এই মন্ত্রী। তার বিদেশে থাকা সম্পত্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। দেশি ও আন্তর্জাতিক আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে কেউ যাতে অনিয়ম ও প্রতারণা করে পার না পেয়ে যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেকে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। কার্যত তারা দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করে প্রতারণা করেছেন এবং জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করেছেন। তাই আইনি প্রক্রিয়ায় এসব সম্পদ উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর আইনি প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলেও পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

সূত্র আরও জানায়, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেতন বাবদ আয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। গৃহসম্পত্তি থেকে আয় দেখিয়েছেন ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৯ টাকা। আর কৃষি খাত থেকে জাবেদের আয় ৮৩ হাজার টাকা, মুনাফা থেকে আয় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০ টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে আসে ৫০ হাজার ৪১৮ টাকা। সব মিলিয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের বছরে আয় মাত্র ৭৪ লাখ ১২ হাজার ৯৭ টাকা। অথচ সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক এই মন্ত্রী যুক্তরাজ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমান। ব্রিটেন ছাড়াও নিজের রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ায়ও। সব মিলিয়ে তিনি পাঁচশরও বেশি বাড়ি কিনেছেন। যেগুলোর মূল্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকারও বেশি। যদিও বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দেশের বাইরে স্থানান্তরের আইনি কোনো সুযোগ নেই। আর বিদেশে বিনিয়োগের কোনো তথ্য আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি সাবেক এই মন্ত্রী।

সাবেক এই মন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শেয়ারে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ৯ কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ টাকা, ৩ কোটি ২৫ লাখ ৬ হাজার ৮৩ টাকা, ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭২ হাজার ২৩৫ টাকা। আর কৃষি-অকৃষি মিলিয়ে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ১০ কোটি ৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯১০ টাকা। আর সম্পদের অংশ হিসেবে আয়কর নথিতে গাড়ির দাম উল্লেখ করেছেন ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ