চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় তারা ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগও দাবি করেছেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মশাল মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন। এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জেলে ভর’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন ভারতে’; ‘ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ, করতে হবে করতে হবে’; ‘এক দুই তিন চার, ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস ছাড়’; ‘স্বৈরাচারের দোসরেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘মুজিববাদ নিপাত যাক, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’; ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশে সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, এই মুজিববাদ যেখানে প্রবেশ করেছে, সেই জায়গাকে পচিয়ে বের হয়েছে। এই মুজিববাদ ৭২-এর সংবিধানকে কলুষিত করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ফ্যাসিস্টদের দালালরা এই দেশে থাকতে পারবে না। শেখ হাসিনার বিচার এই বাংলার জমিনে হবে। এই ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা একটা নতুন সংবিধান, একটি নতুন বাংলাদেশ।
সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আমরা ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের কবর দিলেও এখনো তাদের মূলোৎপাটন করতে পারিনি। এ বাংলার মাটিতে এখনো ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। মো. সাহাবুদ্দিন, যিনি স্বৈরাচারের দোসর ছিলেন আমরা তার পদত্যাগের দাবি জানাই। অন্যথায় এ ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে আরও কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমি আসিফ স্যারসহ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই-আজ আড়াই মাস পর যদি ছাত্রদের রাজপথে এসে আন্দোলন করতে হয় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে, তাহলে আপনাদের কাজটা কী? আসিফ স্যার, আপনি অতি দ্রুত যদি প্রত্যেক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করতে না পারেন, তাহলে শহিদ ও আহতদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
হাসনাত বলেন, ছাত্রলীগ বর্তমান বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিক কি না, সেটা চব্বিশের ১৫ জুলাই প্রমাণিত হয়ে গেছে। ছাত্রলীগে ও আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কবরস্থ হয়ে গেছে ৫ আগস্ট। তারা সীমান্তের ওপারে বসে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা বলে দিতে চাই, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন বাংলাদেশে আর হবে না।
রাষ্ট্রপতিকে তিনি বলেন, চুপ্পু সাহেবকে বলতে চাই, এখনো সময় আছে বঙ্গভবনের বিলাসিতা ছেড়ে আপনি আপনার রাস্তা দেখে নিন। আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার যে সংবিধান, সেটাকে আমরা মানি না। যদিও আপনি সেটারও শপথ ভঙ্গ করেছেন। আপনি যদি ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসন করতে চান, সেটি হবে না।
বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সানজিদা আফিয়া অদিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, হাসিব আল ইসলাম, আব্দুল হান্নান মাসুদ ও আব্দুল কাদের বক্তব্য দেন।
বেরোবিতে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল :
রংপুর ব্যুরো জানায়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার গভীর রাতে রংপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাস থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের কয়েকটি এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবু সাঈদ গেটের সামনে এসে সমাবেশ করে। সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় এই সমাবেশে বেরোবি ছাড়াও শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এ সময় তারা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিচার এবং সংগঠনটি নিষিদ্ধের দাবি জানায়।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বেরোবির সমন্বয়ক রহমত আলী, এসএম আশিকুর রহমান, শামসুর রহমান সুমন, রংপুরের প্রতিনিধি রিফাত হাসান, আলী হোসাইন, সাজ্জাদ হোসেন, নাহিদ হাসান খন্দকার প্রমুখ।