লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ—দুপক্ষই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দীর্ঘ ৩২ বছর তিনি ইরানপন্থী এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। নানা চড়াই উৎরাই পার করে গোষ্ঠীটিকে একটি সুসংহত অবস্থানে নিয়ে গেছেন তিনি। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের সব অপরাধের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ এক কণ্ঠ ছিলেন তিনি। তাই মধ্যপ্রাচ্যে জায়নবাদীদের হিটলিস্টে সব সময়ই শুরুর দিকে ছিলেন এই নেতা।
আততায়ীর হামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে বহু বছর ধরেই জনসম্মুখে আসেননি নাসরাল্লাহ। তবে আড়াল থেকে হিজবুল্লাহকে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে সংগঠিত করার কাজ করে গেছেন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস, ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়া বাহিনীকে প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সঙ্গে।
১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের মুখে পড়লে শিয়া আন্দোলন আমালে যোগ দেন হাসান নাসরাল্লাহ। ইরাকের নাজাফে শিয়া সম্প্রদায়ের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। ইরাক থেকে তাকে বের দিলে লেবাননে ফিরে আবার আমালে যোগ দেন। ১৯৮২ সালে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইসলামিক আমাল’, যা সে সময় ইসরায়েলি আগ্রাসন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এতে সহযোগিতা করে প্রতিবেশী দেশ ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। পরবর্তীতে ইসলামিক আমাল থেকে গঠিত হয় হিজবুল্লাহ বা আল্লাহর দল নামে সংগঠন।
‘ওপেন লেটার’ নামে একটি প্রকাশনা বের করার মধ্য দিয়ে ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে হিজবুল্লাহ। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে ‘ইসলামের প্রধান দুই শত্রু’ হিসেবে আখ্যা দেয় সশস্ত্র গোষ্ঠিটি। সেই বছর ইসরায়েলকে ধ্বংস করার অঙ্গীকারও করে তারা। ১৯৯২ সালে জায়নবাদী আততায়ীর হাতে আব্বাস আল মুসাবি নিহত হলে হেজবুল্লাহ প্রধানের দায়িত্ব নেন হাসান নাসরাল্লাহ।
তার জন্ম ১৯৬০ সালে বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের বুর্জ হাম্মুদে। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। বাবা ছিলেন সবজি বিক্রেতা।
তবে যেই ইসরায়েলের হাত থেকে বাঁচতে দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন শেষ পর্যন্ত তাদের বিমান হামলায় প্রাণ হারালেন হাসান নাসরাল্লাহ। দীর্ঘদিনের নেতাকে হারিয়ে হিজবুল্লাহ বেশ চাপেই পড়বে, এটা বলা বাহুল্য। এখন দেখার পালা, সামনের দিনে নেতাবিহীন হিজবুল্লাহ ঠিক কীভাবে ইসরায়েলকে সামাল দেয়। আর ইরানই-বা মিত্র হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার জবাব কীভাবে দেয়!