Friday, November 8, 2024

এমপি আনার হত্যার মূল মাস্টারমাইন্ড কে এই আখতারুজ্জামান শাহিন?

আরও পড়ুন

এমপি আনার, ইনসেটে আখতারুজ্জামান শাহিন
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসার জন্য গিয়ে পরিকল্পিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার (৫৭)।

হত্যা করা হয়েছে এমন আলামত পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। মরদেহের পাশাপাশি চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড কে? আরও কারা জড়িত? এসবের প্রশ্নের উত্তরও খুঁজছে কলকাতা পুলিশ।

তবে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত একটি নাম এসেছে জোরালোভাবে। তিনি বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান শাহিন, কলকাতায় এসেছিলেন আমেরিকার পাসপোর্ট ব্যবহার করে। এই আখতারুজ্জামানই কলকাতায় এক লাখ রুপিতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন এক বছর আগে।

পরিকল্পিতভাবে খুন করে কলকাতা ছেড়ে বাংলাদেশ হয়ে ইতোমধ্যে তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একাংশ।

এমপি আনারের হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বাংলাদেশের তিনজন ও কলকাতায় একজনকে আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন বাংলাদেশ ও কলকাতা পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে সেই মূল পরিকল্পনাকারী শাহিন আটক নাকি সত্যিই পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি দুই দেশের পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসার প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার পর কলকাতার বরাহনগরে পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে প্রথম উঠেছিলেন আনার। আনার নিখোঁজ হওয়ার পর গত ১৮ মে কলকাতার বরাহানগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন গোপাল বিশ্বাস।

বরাহনগর থানার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সুবেন্দু গোস্বামীকে উদ্বৃতি করে সংবাদমাধ্যমকে গোপাল বিশ্বাস জানান, সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড একজন বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান। যিনি কলকাতায় এসেছিলেন আমেরিকার পাসপোর্ট ব্যবহার করে। এই আখতারুজ্জামান কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলেন এক বছর আগে। যার ভাড়া এক লাখ রুপি।

‘আমি হঠাৎ দিল্লি যাচ্ছি, সঙ্গে ভিআইপি আছে’
এমপি আনারের বাড়িতে নেতাকর্মীদের শোকের মাতম
যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দার ভাড়া করা ফ্লাটে ওঠেন এমপি আনোয়ারুল
গোপাল বিশ্বাস আরও জানান, আখতারুজ্জামান বাংলাদেশের ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের বাসিন্দা। তার সঙ্গে সংসদ সদস্য আনারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশ থেকে সাতজনের সহযোগিতা নিয়ে এই আখতারুজ্জামান সংসদ সদস্য আনারকে হত্যা করে থাকতে পারেন। ওই সাতজনের মধ্যে রয়েছেন, ফয়জুল, মোস্তাফিজুর ও একজন মহিলা।

এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসার জন্য গিয়ে খুন হওয়া সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

বুধবার পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মহাপরিদর্শক (আইজি) অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, আনোয়ারুল আজীমকে খুন করা হয়েছে বলে আমরা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছি। কিন্তু তদন্তে এসে শনাক্ত করা ফ্লাটে তার মরদেহ পাইনি।

অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ওই সংসদ সদস্য সন্দীপ রায় নামের এক ব্যক্তির ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তরে চাকরি করেন।

তিনি ফ্ল্যাট ভাড়া কাকে দিয়েছিলেন, জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা আখতারুজ্জামান নামের এক ব্যক্তিকে। এই আখতারুজ্জামানের সাথে বাংলাদেশের কোনও সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আর বিস্তারিত বলা যাবে না। তদন্তের বিষয় আছে।

ঘটনার দিন চারজন আখতারুজ্জামানের ফ্ল্যাটে যান। সিসিটিভিতে দেখা গেছে, তিনজন বেরিয়ে এসেছেন, শুধু আনার ছাড়া।

হুন্ডি-স্বর্ণের অবৈধ কারবারের দ্বন্দ্ব থেকে বিরোধ?

আনার হত্যাকান্ডের সর্বশেষ মোটিভ সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাসূত্রে জানা গেছে, আখতারুজ্জামান ও সংসদ সদস্য আনারের মধ্যে হুন্ডি ব্যবসা ও স্বর্ণ ব্যবসাকেন্দ্রীক বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে তিনি খুন হয়ে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

মাস্টারমাইন্ড হিসেবে যাকে খুঁজছে কলকাতা পুলিশ সেই আখতারুজ্জামানের ভাই বাংলাদেশের ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান।

তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ছোট ভাই আখতারুজ্জামান শাহিন আমেরিকায় থাকেন। গত রমজানে বাংলাদেশে এসেছিলেন আখতারুজ্জামান। তিনি ব্যবসায়ী। সংসদ সদস্য আনার ও তার পরিবারের সঙ্গে পারিবারিক ভাল সম্পর্ক। ছোটবেলা থেকে তারা খেলাধুলা করেছেন এক সঙ্গে। কোনো ধরণের বিরোধ ছিল এরকম কিছু জানেন না।

সিসিটিভিতে যা দেখা গেলো

১৩ মে বিকেল পাঁচটায় কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেন থেকে শেষবারের মতো বেরিয়ে যান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। সুজুকি মডেলের একটি লাল রঙের গাড়িতে তার বেরিয়ে যাবার সিসিটিভি ফুটেজে আরও দুজনকে দেখা গেছে। এরইমধ্যে গাড়িটি জব্দ করলেও ওই দুই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ১৩ মে বিকেল ৫টা ২৩ মিনিট সঞ্জীভা গার্ডেনের সামনে সুজুকি মডেলের লাল রঙের একটি গাড়িতে ওঠেন আনোয়ারুল আজিম। গাড়িটির নম্বর ডব্লিউবি ১৮এএ৫৪৭৩। অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের গেটের সামনে এক লোকসহ দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। পরে গাড়িটি এসে থামলে আরও একজন নামেন। একটু পরই সেই গাড়িতে চলে যান এমপি আনার। এই গাড়িটিও আটক করেছে কলকাতা পুলিশ।

হত্যার ছক আমেরিকায়, বাংলাদেশ হয়েই পালিয়েছে আখতারুজ্জামান

আনোয়ারুলকে হত্যার পরিকল্পনা হয় আমেরিকায় বসে। এমপি আনার কবে কোথায়, কিভাবে যান তা মনিটরিং করা হয়েছে। আনার কবে কলকাতা ঢুকছেন, কোথায় থাকবেন, তার সব তথ্যই জেনে নেন হত্যাকারীরা। এ কাজে তাদের সহায়তা করতে ওই ফ্ল্যাটটি তাদের দেন মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহিন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ