হঠাৎ দেখলে বড় আকারের ধনেগাছ বলে ভুল হতে পারে। উচ্চতা দুই থেকে তিন ফুট। চিকন সবুজ পাতার ফাঁকে ছোট ছোট সাদা ফুলে আকর্ষণীয় দেখায় গাছগুলোকে। ত্রিভুজের মতো ছড়িয়ে থাকে অসংখ্য শাখা। বাড়ির আঙিনা, রাস্তার দুই ধার কিংবা ফসলের মাঠে জন্মানো এই গাছ হতে পারে মৃত্যুর কারণ। অথচ এ ব্যাপারে জানেন না অধিকাংশ মানুষ।
দেখতে সুন্দর হলেও ছোট ছোট এই গাছ অত্যন্ত ভয়ংকর। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমির আইল, পরিত্যক্ত কৃষি ও অকৃষি জমিতে ছড়িয়ে পড়া এই উদ্ভিদের নাম পার্থেনিয়াম। এটি মূলত বিষাক্ত এক আগ্রাসী আগাছা। এটি গায়ে লাগলে হতে পারে দুরারোগ্য চর্মরোগ। ফুলের রেনু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করলে হতে পারে শ্বাসকষ্ট। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে মৃত্যুর কারণও হতে পারে। পার্থেনিয়াম ভক্ষণকারী গবাদিপশুও পড়তে পারে মৃত্যুঝুঁকিতে।
মেহেরপুর জেলার বিস্তৃত এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে পার্থেনিয়াম। এতে মানুষ ও গবাদিপশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন বেড়েছে, তেমনি ফসল উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ছে জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য। এ সম্পর্কে না জানায় জেলার প্রায় সব রাস্তার দুই ধারে নির্বিঘ্নে বেড়ে উঠেছে মৃত্যুদূত পার্থেনিয়াম।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, এটি একটি বিষাক্ত আগাছা। এটি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে, উৎপাদন কমিয়ে দেয় এমনকি ত্বকের কাটা জায়গায় লাগলে চর্মরোগ দেখা দেয়। গরু-ছাগল খেলে তাদের পেটের পীড়া ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সাউদ কবির বলেন, পার্থেনিয়াম আমাদের শ্বাসনালী ও চর্মতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা কিছু চিকিৎসা দিয়ে থাকি। পার্থেনিয়ামের পার্শপ্রতিক্রিয়ায় চুলকানো বা অ্যালার্জি থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালযয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ বলেন, উদ্ভিদটি অত্যন্ত দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে। জীবদ্দশায় একটি গাছ থেকে ১ লাখ বীজ উৎপাদন করতে পারে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে গবেষণা ও পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আগ্রাসী আগাছা পার্থেনিয়াম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের। তাই এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষাক্ত আগাছা পার্থেনিয়ামের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি এবং বাতাসের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়ায়। আগাছাটি জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও কৃষির জন্য নীরব ঘাতক। পৃথিবীর অনেক দেশেই পার্থেনিয়াম থেকে বায়োগ্যাস, বায়োফার্টিলাইজার ও আগাছা নাশক তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই উদ্ভিদের ব্যাপারে মানুষ সচেতন নন।