ইরানের সদ্য প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু এখনো রহস্যের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। ওই ঘটনায় প্রায় ১০ দিন হয়ে গেলেও কেন এবং কীভাবে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছিল তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
ইসরায়েলের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা, কোনো কিছুই জল্পনা-কল্পনার বাইরে নয়। কিন্তু আসলে সেদিন কী ঘটেছিল তা রহস্যেরই আবৃত রয়েছে। তবে ওই দিনের ঘটনায় রাইসির দেহরক্ষীর আচরণ ও হেলিকপ্টারের পাইলটের কল রেকর্ড প্রকাশ্যে এসেছে।
গেল ১৯ মে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, আরোহীর সংখ্যা ছিল ৯ জন। তাদের মধ্যে দুজন দেহরক্ষীও ছিলেন।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন রাইসির হেলিকপ্টার খুঁজে পায় উদ্ধারকারীরা, তখন ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দ্বিতীয় আরেকজন দেহরক্ষীর মরদেহ খুঁজে পায়নি উদ্ধারকারীরা।
রাইসির মৃত্যুর কথা আগেই জানতেন এই জ্যোতিষী!
এ নিয়ে রহস্য দানা বাঁধলে, আসল সত্য উদঘাটন করে সোশ্যাল মিডিয়া।
টাইম ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে জানায়, রাইসির মৃত্যুর চার দিন পর দ্বিতীয় দেহরক্ষীকে নিয়ে তৈরি হওয়ার রহস্যের উন্মোচন ঘটে। এদিন সোশ্যাল মিডিয়ার এক পোস্টে রাইসির শেষকৃত্যানুষ্ঠানে ওই দেহরক্ষী জাভেদ মাহরাবহলকে দেখা যায়।
জানা যায়, একেবারে শেষ মুহূর্তে জাভেদের বস মেহদি মোসাভি তাকে রাইসির হেলিকপ্টার থেকে নেমে যেতে বলেন। আর তাই সেদিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন জাভেদ।
কিন্তু রহস্য বাড়ছে মোসাভিকে নিয়ে। হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনার পর মোসাভির বাবা ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, তার ছেলে জানত সে আর ফিরবে না।
তিনি বলেন, আমার ছেলে ওই সফরের আগের রাতে বাসায় এসেছিল। বিদায় জানিয়ে গাড়িতে ওঠে। কিন্তু কিছুক্ষণ ফিরে এসে ২০ মিনিট অবস্থান করে। আবার গাড়িতে উঠে চলে যায় কিন্তু কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে ১০ মিনিট ছিল মোসাভি। তৃতীয়বার ফিরে এসে বাবা-মায়ের পায়ে চুমু খান রাইসির এই দেহরক্ষী।
মোসাভির বাবার ভাষায়, ছেলে যে আর ফিরবে না, তখনই বুঝে গিয়েছিলাম।
এই দেহরক্ষীরা ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদস্য। এই বাহিনীর বিশেষ ইউনিট সেপাহ আনসার আল-মাহদি ইরানের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকে।
এমনকি তাদের কাছে সিকিউর কমিউনিকেশনের ফোন থাকে, সেগুলো আবার লোকেশন ট্র্যাকার হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। মোসাভির কাছেও এমন একটি ফোন থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারপরও রাইসিসহ অন্যদের খুঁজে বের করতে ১৬ ঘণ্টা লেগে যায়।
তবে রাইসির জানাজায় যে দৃশ্য দেখা গেছে, তাতে ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব সেপাহকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে না বলেই মনে হয়েছে। কেননা এদিন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনেয়ীর পেছনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের মধ্যেই দুই-তৃতীয়াংশই ছিল সেপাহ’র দেহরক্ষী।
ধারণা করা হয়, শত্রুপক্ষের সরকার যেন রাইসিকে খুঁজে না পায়, তাই ওই ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। তাই হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার বেঁচে থাকা একজন পাইলটের ফোন দিয়ে যোগাযোগ করে।
এদিকে নিউ আরব নিউজ জানিয়েছে, হেলিকপ্টার থেকে করা শেষ ফোন কলের রেকর্ড সম্প্রচার করে ইরানের টেলিভিশন। সেখানে হেলিকপ্টারের পাইলট তাহের মোস্তফাউয়ি ও ইরানের জ্বালানিমন্ত্রী আলি আকবর মেহরাবিয়ানের মধ্যে কথোপকথন শোনা যায়।
যদিও অডিওতে কেবল মেহরাবিয়ানকেই কথা বলতে শোনা যায়। সেখানে তিনি পাইলটকে উদ্দেশ করে মেহরাবিয়ান বলেন, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? তুমি কি ঠিক আছো? বাকিরা কোথায়? তুমি কি একা?
পরস্পর বিরোধী এসব ঘটনা রাইসির মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন?
কারণ রাইসি নিজের অবস্থান আইআরজিসি ও ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে খুবই সুসংহত করেছিলেন। তাই তার শূনতা পূরণ করতে ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বকে খাবি খেতে হতে পারে, এমনটাই ধারণা বিশ্লেষকদের।