প্রতিদিনই লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদের সামনে রিকশা রেখে নামাজ পড়তে যেতেন রমজান আলী। কোনোদিনও তিনি ভাবেননি তার রিকশাটি চুরি হয়ে যেতে পারে। তিনি এতদিনেও যা ভাবেননি ২৮ মে ঠিক সেটিই ঘটেছে তার সঙ্গে। মসজিদের সামনে থেকে তার রিকশাটি চুরি হয়ে গেছে। রিকশা হারানোর পর এখন পাগল প্রায় রমজান আলী।
রিকশা হারিয়ে তিনি প্রতিদিনই মসজিদের সামনে এসে কান্নাকাটি করছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলছেন, রিকশা না হলে আমার পরিবারকে কী খাওয়াবো। রিকশাটাই আমার একমাত্র চলার ভরসা ছিল।
জানা গেছে, রমজান আলী প্রতিদিনই নামাজ পড়তেন লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদে। সেখানে নামাজ শেষে জিকির করতেন তিনি। আর আল্লাহর কাছে পরিবার চালানোর মতো কাজ চাইতেন। পরে ওই মসজিদের মুসুল্লিরা চাঁদা তুলে তাকে একটি রিকশা কিনে দেন। ওই রিকশার আয় দিয়ে ভালোভাবেই চলছিল তার ৫ সদস্যের পরিবার। কিন্তু গত ২৮ মে ওই মসজিদেই নামাজ পড়া শেষে বেরিয়ে দেখতে পান তার রিকশাটি নেই। এরপর থেকে কান্না থামছে না রমজান আলীর।
স্থানীয়রা জানান, রমজান আলী নিয়মিত মসজিদে জিকির করতেন এবং রিকশা চালাতেন। এখন রিকশা হারিয়ে প্রায় পাগল হয়ে গেছেন তিনি। প্রতিদিনই এই রিকশার খোঁজে মসজিদের সামনে এসে কান্না করেন তিনি।
রমজান আলী লালমনিরহাট শহরের উত্তর সাপ্টানা এলাকায় একটি টিনশেড ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী, এক ছেলে, এক প্রতিবন্ধী মেয়ে ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে বসবাস করেন।
রমজান আলী বলেন, সেদিন শহরে ভাড়া নামিয়ে দিয়ে রেল স্টেশন মসজিদের সামনে অটোরিকশাটি রেখে এশার নামাজ পড়ি। পরে এসে দেখি আমার অটোরিকশাটি নেই। এ সময় আমি চারদিকে খোঁজাখুঁজি করি। আমার একমাত্র সম্বলটি হারিয়ে গেল। এই অটোরিকশাটি রেলস্টেশনের জামে মসজিদের ইমাম রমজান আলী হুজুর চাঁদা কালেকশন করে ৩৬ হাজার টাকা দিয়ে আমাকে কিনে দিয়েছিলেন। অটোরিকশাটি হারিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমি ভাড়া বাড়িতে থাকি।
লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা রমজান আলী বলেন, অসহায় অটোরিকশা চালক রমজান আলী এশার নামাজ পড়ার সময় মসজিদের পাশ থেকে অটোরিকশাটি চুরি হয়ে যায়। গত রমজান মাসে রমজান আলীর অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে সবার কাছ থেকে টাকা কালেকশন করে তাকে একটি অটোরিকশা কিনে দেওয়া হয়। সেই অটোরিকশাটি মসজিদ থেকে চুরি হয়ে গেছে। এখন রমজান আলী অসহায় হয়ে পড়েছেন। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান রমজান আলীর একটি অটো রিকশা কিনতে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।
লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের ওসি ওমর ফারুক বলেন, স্থানীয়দের কাছে রিকশা চুরি হওয়ার ঘটনা শুনেছি। তবে তিনি এ বিষয়ে থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি করেননি। তিনি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলে রিকশা উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।