পুলিশে উচ্চাবিলাসী অপেশাদার দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা বিগত সরকারের সময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ‘অতিরিক্ত বল প্রয়োগ’ করেছেন বলে প্রমাণ রয়েছে। এদের অনেকে ছাত্র-জনতার ওপর প্রাণঘাতি গুলিরও নির্দেশ দিয়েছেন। চিহ্নিত কর্মকর্তারা নিজেদের ‘বিশেষ আদর্শে’র পরিচয় দিতেন। পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা কার্যক্রম ও বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চিহ্নিতদের মধ্যে একাধিক অতিরিক্ত আইজিপিও রয়েছেন। তারা নিয়োগে দুর্নীতি, অনিয়ম, গ্রেপ্তার বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। এরই মধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ওই তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার বরাবর উপস্থাপন করা হবে। একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওই সূত্র জানিয়েছে, এদের মধ্যে ২৫জন কর্মকর্তা দেশে আছেন নাকি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, তা বলতে পারছেন না কেউ।
পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেন, পুলিশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বিশেষ একটি এলাকা ও রাজনৈতিক আর্শীবাদপুষ্ঠ কর্মকর্তারাই দায়ী। এরা পুলিশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে বসে পুলিশকে রাজনৈতিক দমন নিপীড়ণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। পিআরবিসহ প্রচলিত যাবতী বিধি লংঘণ করে তারা বিশেষ দলের হয়ে কাজ করেছে। তারা দুর্দণ্ড প্রতাপে ছড়ি ঘুরিয়েছেন সবার ওপরে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবী করছেন অনেকে।
জানা গেছে, পুলিশের ঊর্ধ্বতন অন্তত ২৫ জন কর্মকর্তার খোঁজ মিলছে না। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, গত ৫ আগস্ট বিকেলে হারুন অর রশীদসহ কয়েকজন সিভিল পোশাকে দেয়াল টপকে নগর ভবনে যান, সেখান থেকে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে পালান। অতিরিক্ত আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ কয়েকজন কর্মকর্তা পুলিশ সদর দপ্তরের নতুন ভবনের ছাদের হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারে পালান বলে সূত্র জানায়। ওই কর্মকর্তারা এখন কোথায় আছেন কেউ বলতে পারছে না। অথচ তাদের নির্দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে কাজ করেছেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। আহত-নিহত হয়েছেন তারা। এদের মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদ্যসাবেক প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম ও সদ্যসাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এদেরও কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এই দুই কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাংগীর আলম প্রজ্ঞাপন দুটিতে সই করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এখনো সেটা চুড়ান্ত করা হয়নি। তালিকায় যাদের নাম রয়েছেন পুলিশ সদর দফতরের ৪ কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। ডিআইজি মোল্লা নজরুল, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) বহুল আলোচিত মো. হারুন অর রশীদ, ২০০৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ২১ তম ব্যাচের ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন) প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও ডিবি উপ-কমিশনান মশিউর রহমান (সদস্য সিএমপিতে বদলী) প্রমুখ।
সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ ইনকিলাবকে বলেন, গত ১৫ বছরে পুলিশকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীকে দমন পিড়নের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা দলীয় ক্যাডারের মত ব্যবহার করেছে। এর মাধ্যমে একটি পেশাদার পুলিশ বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থ প্রধান্য পেয়েছে। ফলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ কর্মকর্তারা গুলি করেছে, যা তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা প্রয়োজন।
সুত্রঃ ইনকিলাব