সম্প্রতি একটি হৃদয়স্পর্শী ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। যেখানে একজন পুলিশ সদস্য বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে নামাজরত এক মুসল্লির মাথায় ছাতা ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই মুসল্লি বৃষ্টিতে ভিজেই নামাজ আদায় করছিলেন। তখন একজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে এসে তার মাথায় ছাতা ধরে রাখেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি মসজিদে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় অন্য মুসল্লিদের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে বসেছিলেন শারীরিকভাবে অক্ষম এক ব্যক্তি। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে ওই মুসল্লির মাথায় ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় একজন পুলিশ সদস্যকে। এমন একটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন।
ছবিতে ওই পুলিশ সদস্যের চেহারা দেখা না গেলেও তার নাম দীপ্ত রায় বলে দাবি করেছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপক রাজেশ রঞ্জন সরকার। গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাতে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি।
পোস্টে রাজেশ রঞ্জন সরকার লেখেন, ‘ছবিতে যে পুলিশকে দেখছেন আমার মামাতো ভাই দীপ্ত রায়। আমরাই বাংলাদেশ। একজন হিন্দু পুলিশ একজন শারীরিক অক্ষম মুসলমান ভাইকে তার নামাজ আদায়ের সময় বৃষ্টির জল থেকে বাঁচাতে ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই দেশ সব ধর্মের মানুষের। এই দেশ ইতিবাচক মানুষের। নেতিবাচক মানুষের নষ্ট চিন্তাভাবনা থেকে দেশ মুক্ত থাকুক। আমি গর্বিত এমন ভাই আমার আছে।’
রাজেশ রঞ্জনের পোস্টটি ফেসবুকে প্রায় সাত হাজার শেয়ার হয়েছে। ওই পোস্টে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা প্রশংসাসূচক নানা মন্তব্য করছেন।
ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে একজন লিখেছেন, আমরা এমন বাংলাদেশ চাই। যেখানে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি হবে না। যে যার ধর্ম ঠিকমতো পালন করবে। আরেকজন লিখেছেন, সব পুলিশ খারাপ না। আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, এমন মানবিক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম।
পুলিশ সদস্য দীপ্ত রায়ও ওই পোস্টে মন্তব্য করে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দীপ্ত রায় রাজধানীর গুলশানে ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি ফোর্সে দায়িত্বরত বলে জানা গেছে।
পরে গত কয়েকদিনে ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নেটিজেনরা ব্যাপকভাবে ওই পুলিশ সদস্যের কাজের প্রশংসা করতে থাকেন। তারা মানবিকতার এমন উদাহরণকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখছেন। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, এই ঘটনা ধর্ম, পেশা বা পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে একজন মানুষের প্রতি অন্য মানুষের সহানুভূতি ও সহমর্মিতার পরিচয়।
আবার কেউ কেউ বলছেন, পুলিশ সদস্যদের এমন মানবিক কার্যক্রম সমাজে পুলিশ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা মনে করছেন, পুলিশ সদস্যের এই দায়িত্ববোধ ও মানবিক আচরণ প্রমাণ করে, সঠিক মূল্যবোধের মানুষদের কর্মই সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে।