রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গণমিছিল হয়েছে। জুমার নামাজের পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ একাত্মতা জানিয়ে যোগ দেন। কোথাও কোথাও জুমার নামাজের আগেই মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা।
কালবেলার প্রতিবেদকরা জানান, শুক্রবার (২ আগস্ট) জুমার নামাজের পর কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অংশ হিসেবে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দেখা যায়। মিছিলটি কাটাবন হয়ে আবার সায়েন্সল্যাব মোড়ে এসে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীরা সেখানে তাদের দাবি আদায়ের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এদিকে স্বল্প দূরত্বে নিউ মার্কেটের গাউছিয়ায় স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দেখা যায়। দুই পক্ষের মাঝামাঝি রয়েছে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা।
একই সময় রাজধানীতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে গণমিছিল শুরু হয়। শুক্রবার (০২ আগস্ট) জুমার নামাজের পর এ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি হাইকোর্ট হয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হয়।
জুমার নামাজের আগেই মিছিল করেছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এ সময় মিছিলের সামনে ও পেছনে থেকে নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।
শুক্রবার (২ আগস্ট) বেলা ১১টার আগে থেকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। বৃষ্টির মধ্যেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে সমাবেশ করে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশের বক্তব্যে ছাত্ররা ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
সমাবেশে এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসনের বর্বরতা অতীতের সকল আন্দোলন ছাড়িয়ে গেছে। আড়াই শতাধিক ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। এর বিচার করতে হবে।
বেলা ১১টা ২০ মিনিটে পুলিশ সদস্যরা এসে হাজির হয়। তারা ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে মিছিল কোন পর্যন্ত যাবে, তা জেনে নেয়। এরপর বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে মিছিলটি বের হয়। তারা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফটক থেকে মিছিল শুরু বাড্ডা রামপুরা সড়কের দিকে যায়। সেখান থেকে ঘুরে ইস্ট ওয়েস্টের সামনে এসে শেষ হয়। ফেরার সময় পুলিশি পাহাড়ায় মিছিলটি আসতে দেখা যায়।
ডিএমপি বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ নই। তাাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দুষ্কৃতকারীরা যেন প্রবেশ করে সহিংসতা করতে না পারে সে জন্য নিরাপত্তা দিচ্ছি। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলটি শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের প্রেরিত এক বার্তায় জানানো হয়, ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ নামে নতুন কর্মসূচি পালন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বার্তায় বলা হয়, আপনারা জানেন আমরা আমাদের কোনো ব্যক্তিস্বার্থের জন্য আন্দোলন করছি না। আমাদের আন্দোলন আপনার ও আপনার সন্তানের মুক্তির জন্য। কী অপরাধ ছিল আমাদের? সাংবিধানিক অধিকার চাওয়াটা কি আমাদের অপরাধ? কী অপরাধে শত শত ভাইদের হত্যা করা হলো? আমরা এর জবাব জানি না।
কিন্তু এর জবাব ও বিচার না নিয়ে আমরা আমাদের আন্দোলনকে থামাব না। জাতির এই দুর্দিনে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেপ্তার হওয়া সবার স্মরণে শুক্রবার দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।