সিট সংকট সমস্যার ফলে বাহিরে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী এলাকায় সাময়িক হোস্টেল নির্মাণসহ আবাসন সংকট সমাধানে ১১ দফা দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সভাপতি আবু সাদিক কায়েম উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে স্মারকলিপি দেগন।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ, শিবিরের ঢাবি সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন খান, মিডিয়া সম্পাদক জোবায়ের আহমেদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাবিতে চলমান সংকট সমাধান এবং জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস বিনির্মাণে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয় স্মারকলিপিতে। প্রস্তাবনায় রয়েছে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন, আবাসন, নিরাপত্তা, গবেষণার মানোন্নয়ন, টিএসসি, লাইব্রেরি, শিক্ষক নিয়োগ, ধর্মীয় উপাসনালয়, শরীরচর্চা কেন্দ্র, মেডিক্যাল সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও ডাকসু সংক্রান্ত সংস্কার।
তাদের ১১ দফা দাবি হলো
১. চলমান আবাসন সংকট নিরসন করে শতভাগ আবাসিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণের জন্য ‘এক শিক্ষার্থী, এক সিট’ নীতি গ্রহণ করে, প্রয়োজনে দ্রুত হল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও যেসব শিক্ষার্থীকে হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে না তাদের জন্য সিট ভাড়া বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পরিমাণ মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২. ‘হল চালাবে প্রশাসন’ নীতিতে হল পরিচালনা, সিট বণ্টনসহ সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে হল প্রশাসন। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় যাতে কোনোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রত্যেককেই প্রথম বর্ষ থেকে আবাসিক সিট বরাদ্দ দিতে হবে। সিট সংকট সমাধানের সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী এলাকায় ছাত্রী হোস্টেল চালুর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং টেকসই সমাধান হিসেবে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে দু’টি নতুন হল নির্মাণ করতে হবে।
৪. ক্যাম্পাসে ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. আবাসিক হলগুলোর ক্যান্টিন ও দোকানগুলোতে খাবারের যথাযথ মান নিশ্চিত করতে হবে। খাবারের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় ভর্তুকির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া কলা ভবন ক্যাফেটেরিয়া, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, হাকিম চত্বর, টিএসসি, ডাকসু, কলা ভবনের শ্যাডো সংলগ্ন দোকানগুলোর খাবারের মান বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬. পরিচয় শনাক্তকরণ সাপেক্ষে ছাত্রীদের এক হল থেকে অন্য হলে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। অনাবাসিক ছাত্রীদেরকে পরিচয় শনাক্তকরণ সাপেক্ষে হলে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।
৭. আবাসিক হলগুলোতে পড়ালেখার সুস্থ পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে রিডিং রুম ও লাইব্রেরির পরিসর বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যেকটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ডায়ালগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কার উদ্যোগ নিতে হবে।
৮. আবাসিক হলগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা ও মেডিসিন কর্নার স্থাপন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে কাছাকাছি অবস্থিত হলগুলোর জন্য একটি করে ফার্মেসি স্থাপন কিংবা প্রয়োজনীয় ওষুধের হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু করা যেতে পারে।
৯. কার্জন হল এবং কাজী মোতাহার হোসেন ভবন এরিয়ায় ক্যান্টিন স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।
১০. হলগুলোতে সার্বিক কার্যক্রমে হাউজ টিউটরদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে। পূর্বাচলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।