কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগেরই বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন একাধিক ছাত্রলীগ নেতা।
সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে সেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে।
এ ঘটনায় অন্তত ৮০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বিকেলে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, ঢাকা মেডিকেলে আহত অবস্থায় অন্তত ৭০ শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত জরুরি বিভাগের চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বিজয় ৭১ হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে হঠাৎ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। মুহূর্তেই ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হকিস্টিক, রড, স্ট্যাম্প নিয়ে বঙ্গবন্ধু, জিয়া, একাত্তর হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমণ করতে দেখা যায়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর অধিকাংশই ছিলেন হেলমেট পরিহিত।
শহীদুল্লাহ হলের সামনে ফের সংঘর্ষ, ৪ ককটেল বিস্ফোরণ
ছাত্রলীগের নেতৃত্বে দেখা যায় ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে। ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের অন্যান্য ইউনিটের নেতাকর্মীরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অংশ নেয়।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর ছাত্রলীগের এক নেতা দাবি করে বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের হামলায় ছাত্রলীগেরই বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছে। বিজয় ৭১ হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরই জিম্মি করা হয়েছিল। ওপর থেকে জুতা মারা হয়েছিল। অনেকে আহত হয়েছে, অনেকের মাথা ফেটে গেছে।
বিজয় ৭১ হল থেকে উত্তেজনার সূত্রপাত, ক্যাম্পাস ছাড়া আন্দোলনকারীরা
বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত বলেন, আন্দোলনকারীরা রাজুতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিল সেখানে আমরা তাদের কিছুই বলিনি। কিন্তু তারা হঠাৎ করেই বিজয় একাত্তর হলে আক্রমণ করে আমাদের শিক্ষার্থীদের মারতে থাকে। পরে আমাদের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদেরকে প্রতিহত করতে এগিয়ে যায়। এতে আমাদের প্রায় ২০-২৫ জন আহত হয়েছে। আমিও তাদের হামলায় আহত হয়েছি। আমরা তাদের হলের ভেতরেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। তবে তাদের আমরা বাইরে বের করতে পারছিলাম না কারণ, আন্দোলনকারীরা আমাদের উপর আক্রমণ করছিল। পরে আমাদের সবাই একত্রিত হয়ে তাদেরকে বিতাড়িত করেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের তারা উস্কে দিয়েছে। আমরা খুব দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছি। আজকে তাদেরকে আমরা পাঁচ মিনিটে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছি। আমাদের কিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির, ছাত্রদলকে আমরা যুগে যুগে পরাজিত করেছি। তারা কোনো কিছুই করতে পারে নাই। এবারও কিছু করতে পারবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আমরা বলব, আপনারা আন্দোলন থেকে সরে যান। আপনারা ২০ পার্সেন্ট সরে গেলে, দেখা যাবে বাকি ৮০ শতাংশ পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্ট। পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্টদের কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, সেটা আমরা জানি।
শিক্ষার্থীদের হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শয়ন বলেন, ওরা সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, তারা বিএনপির ইশরাকের কর্মী। আপনারা গণমাধ্যম অন্ধ হয়ে গেছেন। এই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী ১০ থেকে ২০ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেছেন, দলীয় কর্মীদের বাঁচাতে নয় বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ হিসেবেই আমরা রাস্তায় নেমেছি। সন্ত্রাসীরা কমপক্ষে ১০০ জন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালিয়েছে।
হামলা-সংঘর্ষের মধ্যে ছাত্রলীগ কেন এলো, জানালেন ইনান
ইনান বলেন, তারা (কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা) যখন হলে হামলা চালিয়েছে তখন ছাত্রছাত্রীরা বেরিয়ে এসে এই অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আমরা খুবই অবাক হয়েছি আশপাশের এলাকা থেকেও মানুষজন এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, রোববার (১৪ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হেয় করেছেন দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ ডাক দেয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বায়ক আসিফ মাহমুদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এক ভিডিও বার্তায় এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রাতে প্রতিবাদী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে ৩টা ২০ মিনিটে রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আজ দুপুর ৩টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদী সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবেই আজকে রাজু ভাস্কর্যের সমাবেশ করার কথা ছিল ছাত্রলীগের। সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি করে ছাত্রলীগ।