বরিশালের ‘বেলভিউ হসপিটাল এন্ড মেডিকেল সার্ভিসেস’র বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জানাতে গিয়ে উলটো খারাপ আচরণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির সপ্তম তলায় চিকিৎসাধীন এক শিশু রোগীর স্বজনরা। ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, বরিশাল নগরীর মহাবাজ এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ হৃদয়ের ৯ মাস বয়সী সন্তান রায়হান নিউমোনিয়া আক্রান্ত হলে গত ২২ সেপ্টেম্বর বেলভিউ হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দায়িত্বরত চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ‘ভ্যানমাইসিন’ প্রয়োগ করার পরপরই আরও অসুস্থ হয়ে যায় শিশুটি।
সৈয়দ হৃদয় বলেন, ‘প্রেসক্রিপশনে ৫০ এমএল প্রয়োগের কথা লেখা থাকলেও নার্স এসে ১০০ এমএল প্রয়োগ করেন। সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চার মুখমণ্ডল ফুলে যায়। ছটফট করতে শুরু করে। অতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগের বিষয়টি বলায় নার্স দ্রুত ডিউটি ডাক্তারের কাছে যান। কিছুক্ষণ পরে ডিউটি ডাক্তার আমাকে ডেকে পাঠান। সেখানে গেলে ডাক্তার আমাকে বলেন, “আপনি (সৈয়দ হৃদয়) সোজা হয়ে দাঁড়ান। ঠিকভাবে কথা বলেন, কী বলতে চান?” তখন শিশুর শরীরে নার্স অতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগ করেছে জানালে প্রেসক্রিপশন দেখেন তিনি। এরপর ডাক্তার নিজেও স্বীকার করেন, ওষুধ প্রয়োগে ভুল হয়েছে।’
এরপর ডাক্তার আমাকে বলেন, ‘আপনারা যেভাবে টাইম টু টাইম ট্রিটমেন্ট চান তা আমাদের দেওয়া সম্ভব না। বেশি কথা বললে আপনাদের সরকারি হাসপাতালে রেফার্ড করে দেবো।’ এভাবেই ওই ডাক্তার আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকেন।
শিশুটির বাবা অভিযোগ করে বলেন, ‘বেলভিউ হাসপাতালে কোনো চিকিৎসাই ঠিকভাবে হয় না। এখানে সময়মতো নার্স পাওয়া যায় না। ওষুধ প্রয়োগ করে প্রশিক্ষণহীন মানুষের মতো। ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলা যায় না।’
অসুস্থ রাইয়ানের মা তানজিলা আক্তার ঋতু বলেন, ‘সন্তানের ভালো চিকিৎসার জন্য বেলভিউ হসপিটালে এসেছিলাম। এখানে এসে ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছি। আমার বাচ্চাকে ওষুধ দিয়ে আরও বেশি অসুস্থ করে ফেলেছে। ভয়েও এখন কোনো কথা বলতে পারছি না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, নার্স বা ডাক্তারের সঙ্গে। ভুল চিকিৎসায় বাচ্চাটার কি হয় আল্লাহই ভালো জানেন।’
দায়িত্বরত অভিযুক্ত চিকিৎসক সজীবের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা বহিরাগত লোক নিয়েও এসেছিলেন। শিশুটির শরীরে কোনো ভুল চিকিৎসা হয়নি। আমি এসব বিষয়ে আপনাদের (প্রতিবেদক) সঙ্গে কথা বলতে চাই না।’
বেলভিউ হসপিটাল এন্ড মেডিকেল সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি হয়নি। ম্যানেজমেন্টে একটু সমস্যা হয়েছে। তারপরও যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, আমরা তদন্ত করে দেখবো।’
উল্লেখ্য, কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর শ্যালক। এর আগেও এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলাসহ ভুল চিকিৎসার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।