Friday, January 10, 2025

আশ্রয়ণের ৬ ঘর পেল এক পরিবার, এসি লাগিয়ে বিলাসী জীবন

আরও পড়ুন

যশোরের মণিরামপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে একই পরিবারের সদস্যদের নামে ৪ থেকে ৬টি পর্যন্ত ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

৬টি ঘর বরাদ্দ পেয়ে দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করছেন আলতাফ হোসেনের পরিবার। ঘরের মেঝেতে লাগিয়েছেন টাইলস। দেয়ালে তিনটি এসি ও রঙিন টেলিভিশন লাগানো হয়েছে।

মনিরামপুর উপজেলার মধুপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দে এমন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে, ২০২১ সালে বরাদ্দ দেওয়া দুই শতক জমির উপর নির্মিত আশ্রয়ণের প্রতিটি ঘরে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও বারান্দা রয়েছে। একটি ঘর নির্মাণে সরকারের খরচ হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

সরেজমিন দেখা যায়, মণিরামপুর উপজেলার মধুপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২২টি ঘর। সাদা রঙের ঘরগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম উত্তর প্রান্তের ৬টি ঘর। দুই বছর আগে গোলাপী রঙের ঘরগুলোর বারান্দা ঘেরা হয়েছে গ্রিল দিয়ে, মেঝে মোড়ানো হয়েছে টাইলসে, তিনটি ঘরে লাগানো হয়েছে দেড় টনের তিনটি এসি। ঘরে রয়েছে মূল্যবান আসবাবপত্র, টেলিভিশন ও ফ্রিজ। এমনকি উঠানটিও পাকা ঢালাই দেওয়া হয়েছে। দুই স্ত্রী, সন্তান ও শ্যালিকা মিলে ১২ সদস্য নিয়ে এই ৬ ঘরে বসবাস করছেন আলতাফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি।

আরও পড়ুনঃ  চুরি করতে এসে নারীর হাতে ধরা পড়ল দুই চোর

অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এসব ঘর বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। এরপর নিজেদের মতো করে সাজিয়েছেন। তার বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।

তবে ভিন্নকথা বলছেন আলতাফ হোসেন। তার দাবি, আশ্রয়ণের এই জমিতে তিনি ২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে বসবাস করতেন। ২০২১ সালে ওই জমিতে (৭২ শতক) আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। তাকে উচ্ছেদ করার নির্দেশনা দেন ইউএনও। একপর্যায়ে ইউএনও প্রতিশ্রুতি দেন তার পরিবারের যতগুলো ঘর লাগবে, এই প্রকল্প থেকে দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ইউএনও স্যার আমাকে ৬টি ঘরই দিয়েছেন। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকছি।

আরও পড়ুনঃ  শনিবার ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না সিলেটের যেসব এলাকায়

তিনি বলেন, প্রকৃত ভূমিহীন হিসেবেই তারা ঘর পেয়েছেন; স্বচ্ছতা ফেরায় শখ পূরণ করেছেন। তার দুই ছেলে ঢাকায় চাকরি করেন। তারাই ঘরগুলো সংস্কার করেছেন। ঘরে টাইলস, ফ্রিজ, এসি লাগেয়েছেন। এটা তো দোষের কিছু না।

শুধু আলতাফ হোসেন নয়, তার মতো এজাজুল হক মধু নামে আরেক ব্যক্তি বাগিয়েছেন চারটি ঘর। এজাজুল চারটি ঘর নিলেও সেখানে থাকেন না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আধা কিলোমিটার দূরে তার নিজ বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, চারটি ঘরে মাঝে মধ্যে একটি ঘরে আসেন তিনি। বাকিগুলো তালাবদ্ধ থাকে।

আরও পড়ুনঃ  বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান ড. ইউনূসের

এ বিষয়ে এজাজুল বলেন, চারটি ঘরের মধ্যে একটিতে মাঝে-মধ্যে থাকেন তিনি। বাকি তিনটির মধ্যে একটি তার মেয়ে, ভাগ্নি ও ভাইপোকে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তারা কেউ থাকেন না এখানে।

এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরও তিনটি ঘর তিনজন পেলেও তারা কেউ সেখানে বসবাস করেন না। জমির দলিল ও বাড়ির কাগজপত্র বুঝিয়ে নিয়ে তারা অন্য জায়গায় বসবাস করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত সরকারের সময়ে প্রভাব খাটিয়ে যে যার মতো ঘর বাগিয়ে নিয়েছে। ঘর বরাদ্দের সময় সরকারি কর্মকর্তারা কারো কথা শোনেননি। তারা যথেচ্ছাচার করেছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পেলে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ