দেশের প্রথম ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির চিঠি পেয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার মেরিনা খাতুন।
রোববার (১৪ জুলাই) সকালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে এক চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়। উপজেলা পোস্ট মাস্টার মো. আইয়ুব আলীর কাছে থেকে চিঠিটি গ্রহণ করেছেন মেরিনা খাতুন।
জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৮৯তম সভায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়া বীরাঙ্গনা পচি বেওয়ার মেয়ে মেরিনা খাতুনকে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। যা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)’র উপপরিচালক (উন্নয়ন) প্রথম রঞ্জন ঘটকের গত ৭ জুলাই স্বাক্ষরিত পত্র প্রদানের মেরিনা খাতুনকে মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে।
যুদ্ধশিশু স্বীকৃতির চিঠি পেয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুন কেঁদে ফেলেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি স্বীকৃতির চিঠি পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আরও কৃতজ্ঞ স্বীকৃতি পেতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও যে সব সংবাদকর্মী আমার পাশে ছিলেন তাদের প্রতি।
তিনি আরও বলেন, তিন ছেলে ও এক মেয়ে বর্তমানে আমার পারিবারিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ছেলে-মেয়েদের তেমন প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। যার কারণে বর্তমানে অভাব অনাটনে চলে সংসার। আবার কিছুদিন আগে আমার স্বামী ওমর আলী অসুস্থ হয়ে পড়ায় জীবন জীবিকায় অনেকটা টানাপোড়েন। যুদ্ধশিশু হিসেবে সরকারের কাছে রাষ্ট্রীয় সম্মানি ভাতার দাবি জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কামান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আরশেদুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রথম যুদ্ধশিশু হিসেবে মেরিনা খাতুন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের পক্ষে থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি মেরিনাকে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মানি ভাতা দেওয়ারও দাবি জানাই।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাড়াশের মৃত ফাজিল আকন্দের বিধবা স্ত্রী পচি বেওয়াকে স্থানীয় কয়েকজন রাজাকার হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেন। আর সেখানে হানাদার বাহিনীর সেনাদের কাছে পাশবিক নির্যাতন শিকার হন তিনি। এতে করে তিনি সন্তান সম্ভাবা হয়ে পড়েন এবং পরে যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনের জন্ম হয়। পরে ২০২২ সালে ৮ সেপ্টেম্বর বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত পচি বেওয়ার মেয়ে মেরিনা খাতুন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন পাঠান। আবেদনে মেরিনা খাতুন উল্লেখ করেন, তার মা পচি বেওয়াকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০১৮ সালের ৪ জুলাই বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যার মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নম্বর ২০৫। এরই প্রেক্ষিতে তিনি যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান।