সাভারে চুরির অপবাদ দিয়ে এক গৃহকর্মীকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করেছে এক চিকিৎসক দম্পতি। এ ঘটনায় চিকিৎসক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভুক্তভোগী শিশুর মা।
রোববার (১৪ জুলাই) সকালে চিকিৎসক ও তার স্ত্রীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে সাভারের রাজাশন লালটেক এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
চিকিৎসক দম্পতি হলেন- সাভারের রাজাশন এলাকার কাজী ইসমাইল ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন পরশ। কাজী ইসমাইল ৪২তম বিসিএস ক্যাডার ও বরগুনা সদর হাসপাতালে কর্মরত।
নির্যাতনের শিকার শিশুটি সাভারের বিরুলিয়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের মেয়ে মিম।
এ ঘটনায় করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক কাজী ইসমাইল ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন পরশ ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের সঙ্গে পূর্বপরিচয়ের সুবাদে মিমকে গৃহকর্মী হিসেবে তাদের বাসায় কাজে নেয়। গত ১ বছর কাজ করার পরেও ঠিকমতো তাকে বেতন দেয়নি। সেই বেতনের টাকা চাইলে শিশুটিকে নির্যাতন করা হয়।
নির্যাতনের বিষয়টি যাতে শিশুটি তার পরিবারকে জানাতে না পারে সে জন্য সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে নির্যাতনে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করে। বিষয়টি কাউকে না জানাতে ভয়ভীতি দেখায় তারা।
নির্যাতনের শিকার শিশু মিম বলেন, আমি ওই বাসায় প্রায় ১ বছর ধরে কাজ করছিলাম। ওই বাসায় যাওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন আমাকে আদর করেছে। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরই আমাকে মারধর করতে থাকে। সর্বশেষ আমাকে চুরির অপবাদ দিয়ে সারা শরীরে খুঁচিয়ে নির্যাতন করেছে।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক সায়েমুল হুদা কালবেলাকে বলেন, নির্যাতনের শিকার শিশুটি সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। আমরা তার সার্বক্ষণিক চিকিৎসায় মনোযোগ দিচ্ছি। শিশুটি এখন আশঙ্কামুক্ত। তবে তা সারা শরীরে নতুন এবং পুরাতন মিলিয়ে যথেষ্ট আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
সাভার মডেল থানার ওসি শাহ জামান কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুপুরে ভুক্তভোগী শিশুটির মা বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে আমরা বিষয়টি তাৎক্ষণিক তদন্ত করে অভিযুক্তদের দোষী মনে হওয়ায় থানায় একটি মামলা নিয়ে চিকিৎসক ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করি।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা শিশুটিকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। একজন ছোট্ট শিশুকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ছুরি, রান্নার খুন্তি ও তার দিয়ে শিশুটির শরীরে মারাত্মকভাবে আঘাত করা হয়েছে। সাভার মডেল থানা পুলিশ শিশুটিকে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা দিচ্ছে। নির্যাতনের শিকার শিশুটির চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
ওসি শাহ জামান আরও বলেন, রোববার সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।