নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হবে। এটা আরও অনেক আগেই করা উচিত ছিল। মোহাম্মদপুরে আমাদের দলের এক নেতাকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। ওরা ওদের মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে আপনারা নিশ্চিত থাকেন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন, ছিলেন এবং ক্ষমতায় থাকবেন। শুধু নির্দেশনা হলো একটা- কেউ ফাঁকিবাজি করবেন না। এটা করলে নিজেই বাঁচবেন না।’
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় নগরীর রাইফেল ক্লাব প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে আয়োজিত কর্মিসভায় তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, সমস্ত শক্তি এক হয়েছে জাতির পিতার কন্যার বিরুদ্ধে। ১৯৭১ সালে বহু বড় বড় শক্তি এসেছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা তখন বন্দুকও দেখেনি। কিছু ক্ষয়ক্ষতি হবে, কিন্তু বিন্দু পরিমাণ টেনশন করবেন না। শেখ হাসিনাকে এক চুল সরানো ক্ষমতা এদের বাবারও নেই। আমরা প্রস্তুত থাকি যাতে ঢাকা পর্যন্ত যেতে পারি। মুখে মুখে হেডাম দেখাবেন না, অরজিনাল যদি হেডাম ওয়ালা হয়ে থাকেন তাহলে প্রমাণ করেন।
শামীম ওসমান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নারায়ণগঞ্জের বিষয়ে অবগত আছেন এবং তিনি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য ম্যাসেজ দিয়েছেন, এটা সরকারি কোনো বার্তা না। আমার সমাবেশ করার কথা নেত্রীকে বলেছি, তিনি বলেছেন এখন ‘না’। তুমি নেতাকর্মীদের বলে দাও যার যার এলাকায় ও ওলি গলিতে তারা যাতে পাহারায় বসে। স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গি যাতে রাস্তায় না নামতে পারে। অনেক হাইব্রিড ঘরে বসে আছে।
তিনি বলেন, ধরে নিলাম প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকবে না, তাহলে কে থাকবে! যারা রাস্তার মধ্যে মেয়েদের উলঙ্গ করে কাপড় খুলে নিয়ে হাত দিয়ে ছিন্ন বিছিন্ন করে তারা? যারা মেট্রোরেলে আগুন দিচ্ছে তারা? আমাদের সাধারণ ছাত্রদের কাঁধের ওপর বন্দুক দিয়ে তারা এই গেইমটা খেলছে। ছাত্ররা যদি নিজ থেকে সরে যেতো, ছাত্র নামটা যদি না থাকতো, তাহলে তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করা আমার কাছে ১ ঘণ্টার ব্যাপার। ছাত্রদের সব দাবি তো পূরণ করা হয়েছে, আমাদের দল থেকে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগেরও কিন্তু মোশতাক ছিল, সামনেও থাকবে। আমার ৩ আগস্টের মিটিং ক্যান্সেল, আপনারা যার যার এলাকায় অবস্থান নেন। অবশ্য আপনারা নিজেরাই টের পাবেন। কিন্তু এমনভাবে অবস্থান নেবেন না যেখানে আপনাদের ক্ষতি হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের আঘাত করতে আসে, সেই হাত নিয়ে যাতে ফেরত না যায়।
তিনি আরও বলেন, সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনেন আজকের রাত স্বাভাবিক রাত না। সাইনবোড, চিটাগংরোড ওইসব এলাকায় যারা আছেন, আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকবেন। মরার জন্য কিন্তু কেউ প্রস্তুত থাকবেন না। আমরা অলরেডি কিন্তু আক্রান্ত হয়েছি। আমরা কাউকে আঘাত, হামলা, আগুন ও কোনো বোনের গাঁয়ে হাত দেইনি। আমরা অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছি। আর এটা শুধু জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কাজ না, ডক্টরসাব থেকে শুরু করে সাদা-কালা অনেকে জড়িত হয়ে গেছে।
নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, যারা আমার শীতল বাস, শাহ নিজামের পার্ক, আওয়ামী লীগ অফিস ও দোকানপাট লুট করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই; আপনাদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ঠিকানা আমাদের নেওয়া হয়ে গেছে। আমরা কিন্তু আঘাত করিনি, করার দরকারও নেই। জনগণ যদি ক্ষিপ্ত হয়ে আপনাদের বাড়ি ঘরে আঘাত করে আমরা কিন্তু তাদের বিপক্ষে যেতে পারব না। নারায়ণগঞ্জে এখন আর কেউ রাস্তায় নামার সাহস বা বাইরের লোকদের শেল্টার দেওয়ার সাহস দেখাবেন না। কারণ আজকের পরে কালকের দিনে কিন্তু আবার সূর্য উঠবে। আমাদের মারবেন তো পরবর্তী প্রজন্ম আছেন।
নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য আরও বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ আপনারা সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন। মহিলা আওয়ামী লীগ ওয়াচ করে খবর নেন কোথায় কী হচ্ছে। আমরা সবাই প্রস্তত, আপনারা বলবেন কখন দাওয়াত খেতে আসতে হবে। এমন দাওয়াত খামু যাতে জীবনে আর না দেয়। আমরা কাউকে কোন ক্ষতি করতে চাই না। সাধারণ ছাত্ররা আমাদের সন্তান। শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের থেকেও বেশি খারাপ হবে।
সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, আজকে যে মেয়েরা রাস্তায় দাড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে, সেই মেয়েদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যাবে; রাস্তায় বের হতে পারবে না। বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানো চেষ্টা করা হবে, এই চেষ্টা আন্তর্জাতিকভাবে হচ্ছে। নয়তো মমতা ব্যানার্জি বলে না যে, বাংলার দরজা খোলা আছে, তোমরা নক করলে আমরা আশ্রয় দেব। নয়তো ড. সাব ফ্রান্সে বসে বলে না যে, আগাম নির্বাচন দিতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণে সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনুসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা।