Thursday, November 7, 2024

আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি ১৬ বছরের কিশোর

আরও পড়ুন

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মাহিম জেলার পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা অবগত হয়েছেন। তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

এদিকে, ছোট ভাইয়ের কোন খোঁজ না মেলায় বুধবার (৩১ জুলাই) আফলি শাহরিয়ারের বোন সানজানা আখতার স্নেহা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপরই কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এর আগে আলফিকে আটকের বিষয়টি অগোচরেই থেকে যায় সংশ্লিষ্ট সবার।

মাহিমের বোন সানজানা আকতার স্নেহা বলেন, ১৮ জুলাই মাহিম কলেজের উদ্দেশে বের হয় এবং পরে জানতে পারে সেদিনের পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। তখন বন্ধুদের সঙ্গে মিছিলের মাঝে জড়িয়ে যায় এবং পুলিশের টিয়ারশেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। আমরা ওইদিন বিকেল ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। স্থানীয়রা কোনো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। তবে কোন হাসপাতালে সে ভর্তি আছে আমরা তার খোঁজ পাচ্ছিলাম না।

স্নেহা জানান, ওই দিন রাত ১০টার দিকে বাবার কাছে পুলিশের একটা ফোনে আসে এবং জানায় মাহিম পুলিশ হেফাজতে আছে। পরদিন সকালে মাহিমকে ছেড়ে দেওয়া হবে, চিন্তার কিছু নেই। এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলতে নিষেধ করা হয়।

এরপর আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করি, কোথায় আছে সে তার কোনো হদিস পাচ্ছিলাম না। ১৯ জুলাই সকালে পুলিশ জানায়, ওই নামে কেউ নেই। এরপর ওইদিন আনুমানিক বিকেল সাড়ে চারটায় আদালত থেকে কল আসে, মাহিমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা আদালত থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, তাকে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

মাহিমের বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, পুলিশ কমিশনার আমাকে ডেকেছিলেন। আমাদের আশ্বস্ত করেছেন মাহিমকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে, ছেলের সঙ্গে কারাগার থেকে কথা বলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কমিশনার। কিন্তু সম্ভব হয়নি।

মাহিমের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় শিশু মামলার নথি ট্রান্সফার করতে গিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। আগামী ৪ আগস্ট এই মামলার জামিন শুনানি রয়েছে বলেও জানান মোহাম্মদ শাহজালাল।

কী বলছে পুলিশ

তদন্তকারী কর্মকর্তা তাজহাট থানার উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান বলেন, ১৭ জুলাই আমাদের তাজহাট থানায় যখন আগুন দেয়, তখন মাহিম পিকেটিং করছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবির টিম ছিল। ওই সময় সে বিজিবির হাতে ধরা পড়ে।

রংপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) জানান, ১৮ জুলাই যখন থানায় হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট হয় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জিন্সের প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা অবস্থায় আটক হয় মাহিম। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। যেহেতু ১৮ ও ১৯ তারিখে সংঘাত-সংঘর্ষ নিয়ে পুরো বাহিনী ব্যস্ত ছিল, সে কারণে বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মূলত, ২০ তারিখ থেকে আমরা যাচাই সাপেক্ষে গ্রেপ্তার করছি।

যা বলেন আইনজীবীরা

আলফি শাহরিয়ার মাহিমের আইনজীবী বাহারুল ইসলাম বলেন, শিশুদের মামলার বিচার হবে শিশু আদালতে। আগামী ৪ আগস্ট তার জামিন শুনানি। আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর বিচার কখনো পূর্ণবয়স্ক আসামির সঙ্গে হওয়ার সুযোগ নেই।

রংপুর বারের আইনজীবী রায়হান কবীর বলেন, আমরা থানায় যোগাযোগ করেছি। আমাদের বলেছিল থানায় নেই অথচ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এটা বেআইনি।

তিনি বলেন, আমরা কাগজপত্র যাচাই করে দেখেছি, তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। তাকে কেন মামলায় ১৮ বছর দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলো। জবাবদিহিতা না থাকায় আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের পূর্ণবয়স্ক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। এতে শিশুরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবু সাঈদ। এ ঘটনায় এসআই বিভুতিভূষন বাদী হয়ে রংপুরের তাজহাট থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় মাহিমকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ