Friday, November 8, 2024

ট্রেন বন্ধে বেকার হয়ে পড়েছেন প্ল্যাটফর্মের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

আরও পড়ুন

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দীর্ঘ ১৯ দিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন প্ল্যাটফর্মের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঋণ, ধার-দেনা করে চলছে তাদের সংসার। অনেকের ব্যবসার পুঁজিও শেষ হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সরেজমিন দেখা যায়, ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন পুরোটাই যাত্রীশূন্য। স্থানীয়রা ও স্টেশন সংলগ্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্ল্যাটফর্মের ওপর বসে মোবাইলে লুডু খেলছেন। আবার অনেকে গল্পগুজব করছেন। প্ল্যাটফর্মে যাত্রী সাধারণ না থাকলেও বর্তমানে অবস্থান নিয়েছে এলাকার পালিত বেশ কিছু ছাগল। প্ল্যাটফর্মে রিকশা ভ্যান রেখে বিশ্রাম নিচ্ছেন চালকরা। বেচাবিক্রির আশায় দুএকজন পান-বিড়ির দোকান খুলে বসে আছেন খদ্দেরের আশায়। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশন মাস্টারসহ অন্য কর্মচারীরা মাস্টারের কক্ষ বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করছেন।

প্ল্যাটফর্মে পান-বিড়ি বিক্রেতা মাহামুদ আলম জানান, ৩০ বছর ধরে পিতার রেখে যাওয়া পান-বিড়ির ক্ষুদ্র ব্যবসাটি চালিয়ে আসছেন। এ ব্যবসার আয় দিয়েই চলে তার চার সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ। ট্রেন চলাচল করলে পান-বিড়ি বিক্রি করে তার আয় হয় দিন ভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। কিন্তু ১৯ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব পান দোকানে ছিল তার সবটাই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিড়ি ও সিগারেটগুলো। ব্যবসা বন্ধ থাকায় এলাকার দোকানগুলোও বাকিতে খাদ্যপণ্য দিচ্ছে না। বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষের কাছে ঋণ-দেনা করে পরিবারের খাবার জোগান দিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে যেটুকু পুঁজি ছিল সেটি শেষ হয়ে গেছে। ট্রেন চলাচল শুরু হলে দোকানের মালপত্র কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মাহামুদ আলম।

প্ল্যাটফর্মের আরেক ক্ষুদ্র দোকানি নূরু মিয়া জানান, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পানবিড়ির ব্যবসা করছেন। স্ত্রীসহ তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার তার। বড় ছেলে হৃদয় হোসেন ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। দ্বিতীয় ছেলে নাহিদ হোসেন ও তৃতীয় ছেলে জয় হোসেন পিতার অনুপস্থিতিতে ব্যবসা চালান। এর মধ্যে জয় এইচএসসির শিক্ষার্থী এবং মেয়ে রোজা আক্তার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের ভরণ-পোষণ করা কঠিন হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ধার-দেনায় ডুবে গেছেন তিনি। ব্যবসার পুঁজিও শেষ হয়ে গেছে। খেয়ে না খেয়ে চলছে সংসার। তবে দ্রুত ট্রেন চলাচল শুরু হলে এই দুর্যোগ কেটে যাবে।

শুধু মাহামুদ আলম ও নূরু মিয়া নন। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্ল্যাটফর্মের ক্ষুদ্র চা দোকানি কোরবান আলী, আব্দুস সালাম, মিলন শেখ, পান দোকানি নজমুল হক, আকবর আলী, বাবু মিয়া ও পেপার-পুস্তক বিক্রেতা ফারুক হোসেনসহ সবাই বেকার জীবনযাপন করছেন। খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। সবাই ঋণ-দেনাসহ ব্যবসার পুঁজি খেয়ে ফেলেছেন। তবে ট্রেন চলাচল শুরু হলে তারা সবাই এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবেন বলে জানান।

স্টেশন মাস্টার মো. ইসরাফিল ইসলাম বলেন, ১৯ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। অলস সময় কাটছে কর্মচারীদের নিয়ে। ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্ল্যাটফর্মে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা খুব বিপদে পড়েছেন। তারাও প্রতিদিন সকাল থেকে স্টেশনে এসে অলস সময় পার করছেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ