পঞ্চগড়ের সাজু মিয়া (২৬)। সন্তানসম্ভাবা স্ত্রীকে রেখে জীবিকার তাগিদে গাজীপুরে যান জুলাই মাসের ২৪ তারিখ। একই মাসের ২৭ তারিখে তার স্ত্রীর কোলজুড়ে আসে এক ফুটফুটে ছেলে সন্তান। নাম রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদের নামানুসারে আবু সাঈদ। কে জানত মাত্র ১৬ দিনের মাথায় নিজেও পাড়ি জমাবেন সেই আবু সাঈদের কাতারে। সন্তানের মুখ না দেখেই তাকে চলে যেতে হয়েছে না ফেরার দেশে।
এ অবস্থায় সাজু মিয়ার পরিবার ও তার নবজাতক সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ও পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ।
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেলে সাজু মিয়ার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় তার বাবা আজাহার আলীর হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকাও তুলে দেন এই বিএনপি নেতা।
সাজু মিয়ার বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের টোকরাভাষা মিরপাড়া গ্রামে। তিনি সেখানকার আজাহার আলীর ছেলে। ৪ ভাইবোনের মধ্যে সাজু ছিল সবার বড়। তিনি গাজীপুরে একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি করে পরিবারের চালাতেন। তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদের অঙ্গসংগঠন শ্রমিক অধিকার পরিষদের পঞ্চগড় জেলা কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন সাজু।
বিএনপি নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ নবজাতক সন্তানকে কোলে নিয়ে বলেন, পৃথিবীবাসী দেখুন এই অবুঝ সন্তানকে রেখে তার বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। এই দেশকে স্বাধীন করার জন্য জীবন দিয়েছেন।
এই ১৭ দিনের বাচ্চাকে আজকে আমরা কি জবাব দেব? এই সন্তানদের যদি আমরা পুনর্বাসন করতে পারি এবং যোগ্যতা ও মর্যাদা দিয়ে সামনে এগিয়ে নিতে পারি তাহলেই এই জাতি আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণে রাখবে। আমাদের এই অর্জনকে তারা ব্যাহত হতে দেবে না।
তিনি আরও বলেন, এখনো আমাদের এই অর্জনকে ব্যাহত করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। আসুন সবাই আমরা এই সন্তানের দিকে তাকিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমস্ত ষড়যন্ত্র পদদলিত করি। এই সন্তানের পিতার আত্মত্যাগকে মহিমান করি।
এর আগে রোববার (১১ আগস্ট) রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাজু। সাজু মিয়া একদফা দাবির আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন গত ৫ আগস্ট।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের দিন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গাজীপুরের মাওনা হতে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন সাজু মিয়া। মাওনা থেকে ছাত্রজনতা মিছিলটি নিয়ে গণভবনের দিকে রওনা হয়। ওই সময় ময়মনসিংহ থেকে সাতটি পিকআপে করে বিজিবি ও পুলিশ এসে গুলি করতে থাকে।
এ সময় পুলিশের গুলি দুই দফা সাজুর পিঠে লাগে। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।