অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে, এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। কেউ বলছেন, সংস্কার শেষ করার পরই নির্বাচন হওয়া উচিত। কোনো মহল আবার বেঁধে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট সময়সীমা। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আবার চাইছে নির্বাচনটা হয়ে যাক যত দ্রুত সম্ভব; এরপর যত সংস্কার তারাই করবে। এ অবস্থায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কতদিন হতে পারে সে প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন খোদ এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে সাক্ষাৎকারটি দেন ড. ইউনূস। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রচার করে এনপিআর।
নির্বাচন আয়োজন নিয়ে ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয়, সামরিক নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ১৮ মাস ক্ষমতায় থাকা উচিত। আর বিরোধী দলগুলো নভেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল। আপনার যা করতে হবে, তার জন্য ১৮ মাস সময় কি যথেষ্ট?
জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘কেউ কেউ বলছে, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করার জন্য, না হয় আপনি (ড. ইউনূস) যত দেরি করবেন, তত অজনপ্রিয় হয়ে পড়বেন; সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ বলছে, না, আপনাকে অবশ্যই এই সংস্কার শেষ করতে হবে। তাই আপনাকে এই দীর্ঘ সময় থাকতে হবে। কারণ, সবকিছুর সংস্কার না করে আমরা বাংলাদেশ ২.০-তে যেতে চাই না। তাই এই বিতর্ক চলছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা পুরোনো অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। তাহলে এত প্রাণ দেওয়ার মানে কী দাঁড়াল! এর কোনো মানে হয় না।…তাই আমাদের নতুন একটি দেশ গড়ার কাজ শুরু করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, এ জাতি সবচেয়ে বড় একটি সুযোগ পেয়েছে। এর আগে কখনোই সব মানুষ একটি বিষয়ে এতটা ঐক্যবদ্ধ হয়নি যে আমাদের পরিবর্তন দরকার।’
এরপর সংখ্যালঘু আহমদিয়া ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, মাজারে হামলা ও মব জাস্টিসের (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার) শিকার হয়ে মৃত্যু বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, লোকজন বিপ্লবের আবহে ছিল। বিপ্লবী পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। অনেকে খুন হয়েছে। যাদের কারণে তাদের সহযোদ্ধাদের প্রাণ গেছে, তাদের খুঁজছিলেন তারা। এ জন্য তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের সমর্থকদের আক্রমণ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি যখন সংখ্যালঘুদের কথা বলছেন; এই সংখ্যালঘুরা বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়, শেখ হাসিনার দলের সঙ্গে যুক্ত। তাই আপনি এটা আলাদা করতে পারবেন না যে তারা শেখ হাসিনার অনুসারী হওয়ার কারণে নাকি হিন্দু হওয়ার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এটা নিশ্চিত যে তারা আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু যখনই আমরা সরকারের দায়িত্ব নিই, শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। সবাই বলতে থাকি, আমাদের ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে একে অপরকে আক্রমণ করতে হবে।’
প্রতিশোধপরায়ণতার মানসিকতা থেকে সংস্কারের দিকে মানুষকে নিয়ে যেতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিশোধ নেওয়ার ঘটনাটি মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের মতো হয়তো ছিল। এরপর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করে। তবে বিক্ষোভ হচ্ছে, প্রতিশোধমূলক বিক্ষোভ নয়। বেশির ভাগ বিক্ষোভই মজুরি বাড়ানো, চাকরির দাবি নিয়ে, যারা আগের সরকারের সময় চাকরি হারিয়েছিলেন। তারা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন অন্য কিছুর জন্য নয়, শুধু অন্য রাজনৈতিক দল করার কারণে। ফলে সবাই তাদের দাবিদাওয়া পূরণের চেষ্টা করছেন। কারণ, তারা বঞ্চিত হয়েছেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি যে দেখুন, আপনাদের ১৫ বছরের দুঃখ-দুর্দশা আমরা ১৫ দিনে সমাধান করতে পারব না। বিষয়টি সুরাহা করতে আমাদের কিছু সময় দিন। আপনারা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছেন। আমাদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে এটা সমাধান করতে হবে।’