পাঁচ বছর পর প্রথমবারের মতো মুখোমুখি কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বুধবার উভয় নেতার মধ্যকার এই বৈঠক রাশিয়ার কাজান শহরে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।
২০২০ সালের জুনে লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক একরকম তলানিতে ঠেকেছিল। তারপর এই প্রথম ভারত ও চীনের সর্বোচ্চ নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসলেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, দুই দেশের সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনাটাই যে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত – প্রধানমন্ত্রী মোদি বৈঠকে এই বিষয়টির ওপরেই সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন।
অন্যদিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বে চীন ও ভারত উভয়েরই কিছু ‘গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব’ আছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে দুই দেশের দুই রাষ্ট্রনেতা রাশিয়ার কাজানে রয়েছেন। তারা রাশিয়ায় যাওয়ার আগেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) নজরদারি নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছায় দুই দেশ।
তারপর ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকেই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। আর সেই বৈঠকে মোদি বার্তা দিলেন, সীমান্তে শান্তি, পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
২০২০ সালের জুনে গালওয়ান সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। চার বছরের বেশি সময় পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় নজরদারি নিয়ে সম্প্রতি ঐক্যমত্যে পৌঁছায় দুই দেশ। তারপর বুধবার অনুষ্ঠিত এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, অর্থনীতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
মোদি বলেন, “এটা আমার বিশ্বাস যে, ভারত-চীনের সম্পর্ক শুধু দুই দেশের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। সমগ্র বিশ্বের উন্নয়ন, শান্তি, স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
৪ বছরের টানাপোড়েনের অবসানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মোদি বলেন, “সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা।”
মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, সারা বিশ্ব এই বৈঠকের দিকে নজর রেখেছিল। চীনের প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, কাজানে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দেখা করতে পেরে আনন্দিত।
তার ভাষায়, “পাঁচ বছর পরে আমরা নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসছি। শুধু আমাদের দুই দেশের মানুষরাই নন, আন্তর্জাতিক বিশ্বও আমাদের এই বৈঠকের দিকে সতর্ক নজর রাখছে।”
জিনপিং আরও বলেন, “আমাদের দুই দেশের মধ্যে যাতে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ে, আমরা যাতে নিজেদের মধ্যেকার মতবিরোধ ও মতানৈক্য ঠিকমতো সামলাতে পারি এবং আমাদের পরস্পরের ‘উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা’র বিকাশে সহায়তা করতে পারি সেটা আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
ভারত ও চীন উভয়ের জন্যই তাদের ‘আন্তর্জাতিক দায়িত্ব’ পালন করাটাও যে খুব জরুরি, সে কথাও মনে করিয়ে দেন জিনপিং।
প্রসঙ্গত, গত ৪ বছর ভারত-চীনের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবাও বন্ধ ছিল। গালওয়ান সংঘর্ষের পর ২০২২ সালের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে দুই রাষ্ট্রনেতার সাক্ষাৎ হয়েছিল। এরপর ২০২৩ সালের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে সাক্ষাৎ হয়েছিল। কিন্তু সেখানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হয়নি।
উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদি ও শি জিনপিং শেষবার ২০১৯ সালের নভেম্বরে ব্রাসিলিয়াতে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেছিলেন। সেটাও ছিল একটি ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন, যার আয়োজন করেছিল ব্রাজিল। এবং মোদি-শি জিনপিংয়ে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই সম্মেলনের অবকাশেই।