প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার ভোলার তজুমদ্দিনের মাদ্রাসাছাত্র জাহিদুলের এতবড় অপকর্মের খবরে হতবাক তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
কাজের সন্ধানে ২ বছর আগে ঢাকায় যাওয়া ২৭ বছর বয়সী জাহিদুল ঠিকাদারি কাজ করনে এমনটাই জানেন সবাই। কিন্তু আইন শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী গ্রেফতারের পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি ছিল অপ্রত্যাশিত। তবে জাহিদুল ষড়যন্ত্রের শিকার এমন দাবি তার পরিবারের। প্রকৃত অপরাধী হলেও দেশের আইনে শাস্তিও চান তারা।
ব্যবসার কথা বলে কাশেম আহমেদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৭ লাখ নেয়ার অভিযোগের বিষয়টি স্থানীয় থানায় বিচারাধীন। এছাড়া স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে বিভিন্ন কাজের অজুহাতে ৫/১০ হাজার টাকা করে নেয়ার অভিযোগ উঠলেও সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে জাহিদুলের সঙ্গে গ্রেফতার অন্যদের অঢেল ধন সম্পদের যে তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের কোড়ালমারার জাহিদুলের গ্রামের বাড়িতে তেমন কিছু পাওয়া যায় নি। কৃষক বাবা আবদুল লতিফের করা পুরানো চার চালা একটা ভাঙাচোরা টিনের ঘরেই জাহিদুলের পরিবারের বসবাস। চাষাবাদের জন্য ৫৬ শতাংশ নাল জমি ও ঘরবাড়িসহ ১২০ শতাংশ অকৃষি জমি ছাড়া তাদের ওই এলাকায় আর কোনো সম্পদ নেই। জাহিদের স্বজনদের চলাফেরা বা আচরণে কোনো পরিবর্ত দেখেন নি স্থানীয়রা।
পাশের উপজেলার লালমোহনের রায়চাঁদের একটি মাদরাসায় হাফেজি পড়েন। ২২ পারা পর্যন্ত কোরআন পড়ার পর পরিবারের প্রয়োজনে এসে বাড়ির কাছে ডাওরী দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল ও লালমোহন কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। বর্তমানে তিনি লালমোহন কামিল মাদরাসার তৃতীয় ফাজিল তৃতীয়বর্ষের ছাত্র।
জানা যায়, ২০২২ সালে তিনি কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান এবং মিরপুরে বাসা নিয়ে বসবাস করছেন। কয়েক মাস আগে একই গ্রামের (কোড়ালমার গ্রামের) জনৈক আবদুল কুদ্দুসের এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্ত্রী এখনও শ্বশুর বাড়িতে থাকেন।
১৫ বছর আগে জাহিদের বাবা আবদুল লতিফ সৌদি থেকে এসে কৃষি কাজ করছেন। তার মা সাফিয়া বেগম অসুস্থ (শয্যাশায়ী)। আবদুল লতিফের ৭ ছেলে মেয়ের মধ্যে জাহিদুল ৬ নম্বর সন্তান। তার অপর দুই ছেলে হাফেজ ইলিয়াছ ও মো. কবির সৌদি প্রবাসী।
ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ৬টি টিনের ও আঁধা পাকা ঘর রয়েছে। এর মধ্যে দুর্বল ঘরটি জাহিদের পরিবারের। ঘরের মধ্যে সেট সোফা ও একটি খাট ছাড়া উল্লেখ করার মতো কোন আসবাবপত্রও ছিল না। জাহিদুল মাদ্রাসাছাত্র হলেও নিয়মিত প্যান্ট-শার্ট পরে পরিপাটি চলাফেরা করতো। ঢাকা যাওয়ার পথম বছর নিয়মিত বাড়িতে যাওয়া আসা ছিল কিন্তু গত এক বছর বাড়িতে আসা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। পরিবারের লোকজন জানিয়েছে, গত ৬ মাসে একবারও বাড়ি আসেনি জাহিদুল।
জাহিদুলের বড় বোন, মাহেনুর বেগম জানান, তার ভাই এমন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। সে দুই বছর আগে গ্রাম থেকে ঢাকায় গেছে। আর প্রশ্নফাঁসের সিন্ডিকেট বহু আগের। তার বাবার সংসার চলে নানা সংকটের মধ্যদিয়ে। যাদের নাম আসছে তারা সবাই কোটি কোটি টাকার মালিক। আর তার ভাই বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ঢাকায় চলতো। ঘরে শয্যাশায়ী মায়ের সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। তার ভাই এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হওয়ার খবর অনলাইনে দেখে তারা হতবাক। যদি সত্যি এর সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে ভাইর উপযুক্ত বিচার চান তিনি। আর যদি কোনো ষড়যন্ত্র হয় তাহলে ভাইয়ের মুক্তির দাবিও জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারের পর শনিবার পর্যন্ত জাহিদুলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেন নি তার পরিবার। নতুন বউসহ তার পরিবারের সবাই উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জাহিদুলের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানার পর আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান মাহেনুর।