এবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এ হামলা হয়। এতে অন্তত তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৭৪ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসরায়েল। তারা বলেছে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল তাদের শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা। বেসামরিক নাগরিক বা স্থাপনার ওপর হামলার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
জানা গেছে, লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া ওই কমান্ডারের নাম মুহসিন শোকর। তিনি হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নসরুল্লাহর সামরিক উপদেষ্টা। এ নেতা ফুয়াদ শোকর নামেও পরিচিত। তিনি হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের আক্রমণ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
এদিকে হামলার পর মুহসিন শোকরের অবস্থা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েল বলছে, অভিযান সফল হয়েছে। কুখ্যাত কমান্ডার নিহত হয়েছেন। অপরদিকে হিজবুল্লাহ বলেছে, এ হামলা থেকে বেঁচে গেছেন তাদের শীর্ষস্থানীয় এই কমান্ডার। এটি তাদের গোয়েন্দা সফলতা।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ে হিজবুল্লাহর। গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে হিজবুল্লাহ সীমান্তঘেঁষা ইসরায়েলি এলাকায় হামলা করে আসছে।
জবাবে ইসরায়েলও হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রাখে। এ নিয়ে দুই শক্তির মধ্যে পুরোদমে যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখা দেয়। এরই মধ্যে গত শনিবার ইসরায়েলের দখলে থাকা গোলান মালভূমির দ্রুজ অধ্যুষিত মাজদাল শাম গ্রামে খেলার মাঠে রকেট হামলা হয়। এতে ১২ জন নিহত হন। এ হামলার জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করে ইসরায়েল। অঙ্গীকার আসে প্রতিশোধ গ্রহণের। এ পরিস্থিতিতে তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই সরাসরি রাজধানীতে হামলা হলো।
এদিকে রাজধানীতে হামলার আগেই উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করে হিজবুল্লাহ। ইতোমধ্যে তারা তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের স্থানান্তরও শুরু করেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে হিজবুল্লাহর এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, ইসরায়েলিরা লেবাননে যদি বড় কোনো হামলা চালায় তাহলে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। আর এর জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছে লেবানন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, বিদেশিদের পক্ষ থেকে তাদের বার্তা দেওয়া হচ্ছে ইসরায়েল হামলা চালালেও তারা যেন কোনো প্রতিশোধ না নেয়। কিন্তু হামলা হলে তারা অবশ্যই পাল্টা হামলা চালাবেন। তবে এটির পরিধি কেমন হবে তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
তিনি বলেছেন, আগ্রাসনের জবাবের পরিধি ও বিস্তৃতি ঠিক করবেন প্রতিরোধ বাহিনীর নেতারা। বিদেশি দূতরা বলছেন ইসরায়েল হামলা চালালে আমরা যেন প্রতিশোধ না নেই, যেন যুদ্ধ ছড়িয়ে না দেই। কিন্তু আমরা জবাব দেব।
এই নেতা আরও হুমকি দিয়েছেন, যদি ইসরায়েলি সেনারা লেবাননে স্থল হামলা চালায় তাহলে হিজবুল্লাহও দখলদার ইসরায়েলে স্থল হামলা চালাবে।
তিনি বলেছেন, আমরা ইসরায়েলের কাছ থেকে কোনো স্থল হামলার আশঙ্কা করছি না। কিন্তু তারা যদি স্থল হামলা চালায় তাহলে আমরা প্রস্তুত। যদি তারা লেবাননে প্রবেশ করে তাহলে আমরা গ্যালিলিতে (ইসরায়েলি সীমান্তবর্তী অঞ্চল) প্রবেশ করব।
এ ধরনের হুংকারের মধ্যেই ইসরায়েল রাজধানীতে হিজবুল্লাহর প্রাণকেন্দ্রে হামলা চালালো। এখন হিজবুল্লাহ কী জবাব দেবে তাই দেখার বিষয়।