সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা ও রায়গঞ্জ আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ১৯ জনকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ শহরে দুপক্ষের সংঘর্ষে যুবদল-ছাত্রদলের তিন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। সব মিলিয়ে এ জেলায় ২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দুই এমপি, এক সাবেক এমপি, আদালত ভবন, একাধিক আওয়ামী লীগ অফিস, আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি-গাড়ি। ভাঙচুর করা হয় পৌর মেয়রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
গতকাল রোববার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সদর, রায়গঞ্জ ও এনায়েতপুরে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টা থেকে এনায়েতপুর থানা এলাকায় দিনভর তাণ্ডব চালায় বিক্ষোভকারীরা। থানায় ঢুকে অগ্নিসংযোগ ও ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে কোনো সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারেনি। সাংবাদিক বা ক্যামেরা দেখলেই তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। দিনভর আন্দোলনকারীদের দখলে ছিল এনায়েতপুর থানা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল ১০টায় পাঁচ সহস্রাধিক আন্দোলনকারী লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে এনায়েতপুরের বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল করেন। এরপর দুপুর ১টার দিকে তারা এনায়েতপুর থানায় হামলা চালান। থানার গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীরা বাধা উপেক্ষা করে থানার গেট ভেঙে পুলিশের ওপর হামলা চালান। এক পর্যায়ে থানায় অগ্নিসংযোগ করে তারা। তখন পুলিশ সদস্যরা পালানোর চেষ্টা করলে ১৩ জনকে ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
বিষয়টি জানার জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা সারাদিন চেষ্টা করলেও কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি। জেলা পুলিশের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক সাংবাদিকদের ১৩ জন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি ১৩ পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ঘটনাস্থলে আমাদের ফোর্স যাচ্ছে।’
নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন যুবদল নেতা রঞ্জু (৪০), যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফ ও ছাত্রদল কর্মী সুমন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু তিনজনের নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা হামলা চালিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ড. জান্নাত আরা হেনরী এমপি ও সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাড়ি, ভূমি অফিস, নির্বাচন অফিস, ত্রাণ কর্মকর্তা কার্যালয়, মৎস্য অফিস, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়।
এ ছাড়াও জেলার উল্লাপাড়া ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং শাহজাদপুরের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানায় আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা।