বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রলীগ, যুবলীগের গুলিতে আহত হন ফেনী সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. সরোয়ার জাহান মাসুদ (২২)। আহত মাসুদকে দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে বাধা দিলে ঘাতকদের পা ধরেন তার ভাই আল সামির। কিন্তু তারা তাকে হাসপাতালে না পাঠাতে দিয়ে আবারও মারধর করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
নিহত মাসুদ দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জায়লস্কর গ্রামের মীর বাড়ির প্রবাসী মো. শাহাজাহান টিপুর বড় ছেলে। এর আগে রোববার (৪ আগস্ট) ফেনীর মহিপালে ছাত্রজনতার বিক্ষোভে গুলি চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ।
নিহত মাসুদের মেজো ভাই আল সামির বলেন, ঘটনার দিন আমিও মিছিলে ছিলাম। আমার ভাই ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে দেশরক্ষার মিছিলে শামিল হয়। আমরা কাছাকাছি থাকলেও হামলার সময় আলাদা হয়ে যাই। এর কিছুক্ষণ পর আমাকে কল দিয়ে জানায় আমার ভাই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মহিপাল কলেজের সামনে আছে।
তিনি বলেন, আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিতে গেলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের আটকে রেখে আবার পিটুনি দেয়। আমাকেও অনেক মারধর করে। আমি তাদের পা ধরে কান্নাকাটি করেছি। কিছুক্ষণ পর একজন এসে নিয়ে যেতে বলে। তারা আমাদেরকে মারধর করে। এমন নির্মমতা মানুষ করতে পারে ভাবতে এখনও গা শিউরে উঠে।
মাসুদের সহপাঠী সায়েদ হোসেন বলেন, মাসুদকে আমরা হাসপাতালে আনার সময় দাগনভূঞার বেকেরবাজারে পথরোধ করে ছাত্রলীগ যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সেখানে ৩০-৪০ জন ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডার আমাদের সিএনজি যেতে দিচ্ছিল না। আমাকেসহ অন্যদের এলোপাতাড়ি মারধর করে তারা। পরে কোনোরকম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মাসুদের বাবা মো. শাহাজাহান বলেন, দেশ কি মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। একটি স্বাধীন জাতির নিরাপত্তহীন জীবন কাম্য নয়। আমার মাসুদকে আল্লাহ শহিদি মর্যাদা দিয়ে জান্নাত দিন। ছেলেতো পাব না। আমার ছেলেসহ হাজার হাজার ছেলের রক্তের বিনিময়ে যেন শান্তি আসে এ আশা করছি।
তিনি বলেন, দেশরক্ষা করতে গিয়ে আমার নিরস্ত্র ছেলেকে ঘাতকেরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। ফেনীর জনপদে ছাত্রদের ওপর গুলি করা হয়েছে। আমি চাই আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতি যেন আর না আসে।