ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। শুক্রবার (০৯ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগর আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে এক সম্প্রীতি সমাবেশে এ আহ্বান জানান তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী শান্তি-শৃঙ্খলা ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় এই সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
নুরুল হক নুর বলেন, ২০১৪, ‘১৮, ‘২৪ সালের নির্বাচনে ভারত শেখ হাসিনাকে একচ্ছত্র সমর্থন দিয়েছিল। সারা বিশ্ব যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে, তখনও ভারত শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে মরিয়া। আমাদের পাশের দেশ ভারতকে বলব, আপনারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখুন। একটা দলের জন্য সম্পর্ক নষ্ট করবেন না। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দিবিনিময় চুক্তি রয়েছে। শেখ হাসিনাকে অন্য দেশে পাঠানোর তদবির না করে অবিলম্বে বাংলাদেশে পাঠানো হোক। অন্যথায় ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও করবে গণঅধিকার পরিষদ
তিনি বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করেছে। তাদের উচিত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা। আশা করি, এ সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারকারীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
নুর আরও বলেন, ছাত্র-জনতা যখন বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছে, তখন একদল মানুষ নৈরাজ্য করছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় দখলদারিত্ব চালাচ্ছে, লুটপাট করছে। এসবের মূল উদ্দেশ্য ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে ব্যর্থ করা। তাই ছাত্র-জনতাকে বলব, নৈরাজ্য রোধে পাড়ায়-পাড়ায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করুন। এসব নৈরাজ্য গণঅধিকার পরিষদ, বিএনপি, জামায়াত করছে না। এগুলো কারা করছে- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা।
গণঅধিকার পরিষদের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, বিপ্লবের পরে আবার প্রতিবিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা থাকে। ইতোমধ্যে সর্বত্র বিশৃঙ্খলা, ডাকাতি, রাহাজানি, হানাহানি শুরু হয়েছে। এগুলো কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। আমাদের অর্জনকে বিতর্কিত করতে এ চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল এবং জনগণকে সর্তক থাকতে হবে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এ সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে তাদের উপর জনগণের আস্থা রক্ষা করবে বলে মনে করি। এই মুহূর্তে দরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি সেক্টর সংস্কার করা। আগামী ১ মাসের মধ্যে সব সুবিধাভোগী কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান ও রবিউল হাসানের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শওকত, সহ-সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিল, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সুহেল রানা সম্পদ প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে দলটির মিছিল গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া ঘুরে পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল, বিএনপির দলীয় কার্যালয়, নাইটিংগেল মোড় হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।