গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুম-খুন ও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবারের পাশে রয়েছে বিএনপি। আট বছর ধরে এমন সহস্রাধিক পরিবারের সহায়তায় নানা কার্যক্রম করছে দলটি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দুই ঈদে উপহার ও আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজন অনুযায়ী পাকা বাড়ি নির্মাণ, বিবাহযোগ্য কন্যার বিয়েতে আর্থিক সহায়তা প্রদান, সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা অন্যতম। আগামীতেও এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। আর ভবিষ্যতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারকে পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবে বিএনপি। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।
বিএনপির ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দলটির পক্ষ থেকে এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হতাহতদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে আন্দোলনে বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন, শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে আহত ৫০ জনকে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে দলটি।
জানতে চাইলে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন কালবেলাকে বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সহায়তায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে পাকা বাড়ি নির্মাণ, বিবাহযোগ্য কন্যাকে বিয়েতে সহায়তা করা, সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি ভবিষ্যতে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পারলে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করা হবে। এ ছাড়া তাদের ‘শহীদি মর্যাদা’ দেওয়া হবে। তাদের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ স্থাপনার নামকরণও করা হবে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপির ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। এরপর ২০১৪ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে বিনা ভোটে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে নেতাকর্মীদের হামলা-মামলার পাশাপাশি গুম-খুনের পথ বেছে নেয় তারা। উদ্দেশ্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় থাকা।
দলটির দাবি, গত ১৫ বছরে প্রায় দেড় লাখ মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৫০ লাখেরও বেশি নেতাকর্মী আসামি হয়েছেন। এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা। এ ছাড়া এই সময়ে সহস্রাধিক নেতাকর্মী গুম-খুন ও পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়। এদের মধ্যে অনেককে এক-দুই-তিন বছর ধরে গুম করে রাখার পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় কাউকে কাউকে আবার চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এখনো শতাধিক নেতাকর্মী নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি বিএনপির।
হত্যার শিকার, নিখোঁজ ও ‘নির্যাতিত’ নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেখভালে আট বছর ধরে কাজ করে আসছে বিএনপি। শুরুতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে ‘জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল’ নামে একটি সংগঠন বিচ্ছিন্নভাবে কাজ শুরু করে। প্রতি বছর ঈদের সময় স্বজনদের উপহার ও আর্থিক সহযোগিতা দিতে থাকে। পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় চলতি বছরের ২২ মার্চ ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে ৯ সদস্যের নতুন সেল গঠন করে বিএনপি। দলের মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমনকে সেলের আহ্বায়ক ও কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুনকে সদস্য সচিব করা হয়। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এর প্রধান উপদেষ্টা এবং দলের কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত ও প্রচার সম্পাদক (বর্তমানে যুগ্ম মহাসচিব) শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে করা হয় উপদেষ্টা।
জানা গেছে, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সেলের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পরিবারের বিবাহযোগ্য তিন কন্যাকে বিয়েতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, যার সর্বশেষটি ছিল সাতক্ষীরায়। গত জুলাইয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার কাশিমারি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ‘নিহত’ অলিউল্লাহ মোল্লা অলির বড় মেয়ে নাইমার ওই বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। বিএনপির দাবি, ২০১৬ সালের ১০ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন অলিউল্লাহ মোল্লা অলি।
এ ছাড়া নীলফামারী ও ফেনীতে ক্ষতিগ্রস্ত দুই পরিবারকে পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সেলের সিনিয়র সদস্য ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান কালবেলাকে বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, সেসব পরিবারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে রয়েছি। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দলের এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তারা সারা দেশের নেতাকর্মীদের এই বার্তা দিতে চান যে, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার নেতাকর্মীদের দল ভুলে যায়নি, সব সময় তাদের পাশে রয়েছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ওইসব পরিবার কখনো নিজেদের একা কিংবা অসহায় মনে করবে না। বিএনপি আগামীতে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারকে পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তারা।