পাবনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তসলিম হাসান খান সুইটের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম ওবায়দুল্লাহর জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সদর উপজেলার পৌর শহরের দক্ষিণ রাঘবপুরে এসএম ওবায়দুল্লাহর মালিকানাধীন সোয়া তিন কাঠা জমি দখলে নেন ছাত্রদল নেতা সুইট।
এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম ওবায়দুল্লাহর বড় ভাই ব্যবসায়ী রইস উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমার ছোট ভাই ওবায়দুল্লাহ ২০১৯ সালে ছাব্বিরুল নামে একজনের কাছ থেকে পৌর শহরের দক্ষিণ রাঘবপুর মৌজার সোয়া তিন কাঠা জমি বায়নাকৃত রেজিস্ট্রার দলিল মূলে ক্রয় করে। জমি ক্রয়ের কিছুদিন পর ওই জমির মালিকানা দাবি করে সাবেক ছাত্রদল নেতা সুইট।
তিনি জানান, ওই জমির মালিক তার মা। এ ঘটনায় আমরা জমির মালিক ছাব্বিরুল ও সুইটের মা রওশন আরা খানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করি। মামলা নম্বর ৫০০/২০২০। আদালত ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ওই জমির ওপর নিষেধাজ্ঞা (স্থিতাবস্থা) জারি করেন, যা এখনো বলবৎ রয়েছে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে পুঁজি করে গত ৬ আগস্ট আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একদল দুর্বৃত্তকে সঙ্গে নিয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা সুইট ওই জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, এ সময় প্রতিবাদ করতে গেলে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন ছাত্রদল নেতা সুইট ও তার লোকজন। বর্তমানে আমি পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে পাবনা সদর থানার কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় থাকায় আইনি পদক্ষেপ নিতে পারিনি।
অন্যদিকে, এ ঘটনায় ব্যবসায়ী রইস উদ্দিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে ছাত্রদলের সাবেক নেতা তসলিম হাসান খান সুইটের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, পাবনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজনৈতিক পদ ব্যবহার করে বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। তার আপন খালু এসএম গোর্কী শেখ হাসিনার ফটোগ্রাফার ছিলেন। তার দুই খালা পাবনা যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি। এক খালা ইডেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। বিগত দিনে মামা খালা-খালুদের প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে এসেছেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম ওবায়দুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, জমিটি ২০১৯ সালে পাবনার স্থানীয় ছাব্বিরুল নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ক্রয় করি। এর কিছুদিন পরই ওই জমির মালিকানা দাবি করেন পাবনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তসলিম হাসান খান সুইট। এ ঘটনায় জমির মালিক ছাব্বিরুলের বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনানি শেষে ওই জমির ওপর নিষেধাজ্ঞা (স্থিতাবস্থা) জারি করেন, যা বলবৎ রয়েছে। এরই মধ্যে গত ৬ আগস্ট আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একদল দুর্বৃত্তকে সঙ্গে নিয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা সুইট ওই জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আদালতের আদেশ মেনে চললেও সুইট সেটি ভঙ্গ করেছেন।
এ ঘটনায় পাবনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তসলিম হাসান খান সুইট কালবেলাকে বলেন, জমির মালিক আমার আমার মা রওশন আরা খান। আমাদের কাছে জমির সব কাগজপত্র রয়েছে। আগেও ওই জমিটি আমার দখলে ছিল। সম্প্রতি সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করেছি।
তিনি বলেন, ওই জমির মালিক ছাব্বিরুল ইসলাম ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর আমার মা রওশন আরা হককে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেন। জমির দলিল নম্বর ১৭৭০৪।
এ ঘটনায় জমির প্রকৃত মালিক ছাব্বিরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, জমিটি বায়নাকৃত রেজিস্ট্রি দলিল মূলে এসএম ওবায়দুল্লাহর কাছে বিক্রি করেছিলাম। জমি নেওয়ার সময় তিনি অর্ধেকেরও বেশি টাকা আমাকে বায়না দিয়েছেন। কিছুদিন পর আমার টাকার খুব প্রয়োজন পড়ে। এরপর থেকে একাধিকবার ওবায়দুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, ঢাকাতেও গিয়েছিলাম দেখা করার জন্য; কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেননি। পরে জমিটি সুইটের মা রওশন আরা হকের কাছে বিক্রি করেছি।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আদালতে মামলা চলছে। সাক্ষ্যও দিয়েছি। এখন আদালত যার পক্ষে রায় দেবেন, জমির মালিক তিনি হবেন।