লম্বা কথায় অভ্যস্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এক পরিচালক এবার ব্যতিক্রম। কিছুতেই কথা বাড়াতে চান না তিনি। ফোন রাখার তাড়াহুড়ায় স্পষ্ট যে প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারলেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।
স্পর্শকাতর সময়টি এভাবেই পার করছেন দৃশ্যপটে থাকা আরো অনেকে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিসিবিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ফেরানো জরুরি হলেও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে আসা পরিচালকদের কিছু করারও নেই। তাঁরা জানেনও না যে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারবেন নাকি সরে যেতে হবে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কী ভাবছেন তাঁরা?
গতকাল একটি বৈঠক করেন সক্রিয় থাকা বিসিবির পরিচালকরা। সেখানকার এক পরিচালককে নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, সংস্কারের জন্য সহযোগীতা করতে প্রস্তুত তিনি।
আরেকজন বোর্ড পরিচালক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওনার (নাজমুল) সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। অন্য এক পরিচালকের সঙ্গে আছে। উনিই জানিয়েছেন, পাপন ভাই সহযোগীতা (পদত্যাগ) করতে চান।’
বিসিবি সভাপতি নাজমুল ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন।
বোর্ডের নারী বিভাগের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী সংসদ সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া নাঈমুর রহমান, শেখ সোহেলসহ একাধিক বোর্ড পরিচালক আওয়ামী লীগের পরিচয়ধারী। তাঁদের অনেকেই দেশ ছেড়েছেন কিংবা গাঢাকা দিয়েছেন। এর বাইরে যে সাত-আটজন বোর্ড পরিচালক দৃশ্যপটে আছেন, তাঁরা ১১ আগস্ট ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে একটি বৈঠক করে এসেছেন। তবে এঁদের কেউই ৫ আগস্টের পর বিসিবিমুখী হননি।
তাই গতিশীল নয় ক্রিকেট বোর্ডের অনেক কার্যক্রমই।
এদিকে বোর্ড পরিচালকদের পদত্যাগের দাবি তুলে মিরপুরে দফায় দফায় মানববন্ধন ও মিছিল করেছে বিরোধী পক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা পেলে পদত্যাগ করতে রাজি বলে জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন পরিচালক, ‘আমাদের যেভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে আমরা সেভাবেই কাজ করব। আমাদের যদি সরে যেতে বলা হয়, সরে যাব। কাজ চালিয়ে যেতে বলা হলে চালিয়ে যাব।’
বোর্ড পরিচালক ও আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদের কণ্ঠেও সেই একই সুর, ‘ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক পদ তো আর আমার জীবিকার উত্স নয়। যদি আমি না থাকলে ভালো হয় তবে থাকব না। যদি সুযোগ পাই তবে কাজ করে যাব। যদি না চায়, তবে তো থাকা যাবে না। জোর করতে গেলে ক্রিকেটেরই ক্ষতি হবে।’
বিসিবির ২৫ জন পরিচালকের মধ্যে ২৩ জন কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত পরিচালক। চলমান পরিস্থিতিতে ক্রীড়া পরিষদ থেকে কোনো বার্তা আছে কি না বা পদত্যাগের বিষয়ে কী ভাবছেন, জানতে চাইলে সাজ্জাদুল আলম বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার বলার কিছু নেই। আমি এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ একই রকম উত্তর দিলেন জালাল ইউনুসও।
ক্রিকেট বোর্ডে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার খড়্গ নামতে পারে। এর আগে গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে দুই মাস নিষিদ্ধ ছিল শ্রীলঙ্কা। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে এক পরিচালক বলেন, ‘দেশের ভালো চাইলে, ক্রিকেটের ভালো চাইলে সরকারকেও বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ সিদ্ধান্ত যা-ই আসুক না কেন, সেটি মেনে নিতেও তৈরি পরিচালকদের বড় একটি একাংশ।