ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে চরম দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ খাত। সাড়ে ১৫ বছরে কোনো দরপত্র ছাড়াই বেসরকারি খাতে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এর বেশিরভাগই কোনো কাজে আসেনি। সরকারি হিসাবে উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বলা হলেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মেলেনি। এমনকি দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত, তারও সঠিক কোনো হিসাব নেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে। সবার জন্য সরবরাহ নিশ্চিত না করে শুধু সংযোগ দিয়েই শতভাগ বিদ্যুতায়নের কৃতিত্ব জাহির করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগ
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রাপ্ত হিসাবে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার বিবেচনায় (১ ডলার সমান ১১৮ টাকা) বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। একই সময় শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামেই লুটপাট হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে শুধু সক্ষমতা দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ এই টাকা নিয়ে গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এসব কেন্দ্রের বেশিরভাগের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও রক্ষণাবেক্ষণেও চরম অনিয়ম এবং লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর বিদ্যুৎ খাতের লুটপাটের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দুই কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
সাড়ে ১৫ বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে শেষ দুই মেয়াদে তার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবাসন ব্যবসায়ী নসরুল হামিদ বিপু। সংশ্লিষ্টরা জানান, যোগ্যতা বিবেচনা না করেই তিনি নিজের পছন্দের লোকজনকে বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে বসিয়েছেন। এর সর্বশেষ উদাহরণ পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান। বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করা এই কর্মকর্তা নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই গণমাধ্যম এড়িয়ে চলতেন।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও রক্ষণাবেক্ষণেও চরম অনিয়ম এবং লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর বিদ্যুৎ খাতের লুটপাটের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দুই কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
সাড়ে ১৫ বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে শেষ দুই মেয়াদে তার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবাসন ব্যবসায়ী নসরুল হামিদ বিপু। সংশ্লিষ্টরা জানান, যোগ্যতা বিবেচনা না করেই তিনি নিজের পছন্দের লোকজনকে বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে বসিয়েছেন। এর সর্বশেষ উদাহরণ পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান। বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করা এই কর্মকর্তা নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই গণমাধ্যম এড়িয়ে চলতেন।
গিয়ে গত ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা। দেশটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয় ২০১৩-১৪ অর্থবছর। সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল প্রায় ৫০১ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছর আমদানি বাড়ায় ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়ে দাঁড়ায় ৯২২ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছর কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৮৪০ কোটি টাকা। তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানি কিছুটা বাড়ে সঙ্গে ক্যাপাসিটি চার্জও। ওই অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয় ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি আরও বৃদ্ধিতে চুক্তি হয়। এতে ক্যাপাসিটি চার্জ একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছর ১ হাজার ৮০৫ কোটি এবং ২০২১-২২ অর্থবছর ১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। আর ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছর মিলে আমদানির বিপরীতে ৪ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে।
অন্যদিকে শুরুতে তিন বছর মেয়াদে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলেও দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে মেয়াদ। আবার একই কেন্দ্র সরকারের কাছে একাধিকবার বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, এসব কেন্দ্রের মোট বিনিয়োগের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগকারী দেয়, বাকিটা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে মেটানো হয়। পিডিবি তথা সরকার সুদসহ সেই ঋণ (চুক্তি অনুযায়ী) ৩ বছরে শোধ করে দেয়। পাশাপাশি ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্টের ওপর দেওয়া হয় মুনাফা (রিটার্ন অব ইক্যুইটি)। সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় শোধ করে দিলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রটা ওই কোম্পানিরই রয়ে যায়। পরে মেয়াদ বাড়ানো হলেও একই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে ফের নির্মাণ ব্যয় পরিশোধ করা হয়। তা আগের চেয়ে কিছুটা কম হয়। এভাবে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মাধ্যমে লুটপাট করা হয়েছে।
গত বছর প্রকাশিত আইএমইডির প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বলা হয়েছে, ‘লুটপাট সরকারের গোচরেই হচ্ছে। আর ক্যাপাসিটি চার্জ হচ্ছে ‘লুটেরা মডেল’। ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে বিনিয়োগ আসবে না বিদ্যুৎ খাতে—এমন মিথ্যাচার বন্ধ করতে হবে।’
ডলারে পেমেন্ট করা বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তিকে বিদ্যুৎ খাতের প্রধানতম সংকট হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ডলার নয়; বরং টাকায় পেমেন্ট দিতে হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশীয়, তাদের ফরেন কারেন্সি পেমেন্ট দেওয়া অযৌক্তিক। ইউনিটপ্রতি উচ্চমূল্য, ক্যাপাসিটি ও ওভারহোলিং চার্জ, স্বল্পমূল্যে জ্বালানি ও জমি, সহজ ব্যাংক ঋণ, শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা ইত্যাদি ‘বাজেট ড্রেনিং’ গ্যারান্টি বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের তহবিল সংকটের সমাধান পাওয়া যাবে না।’