বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত গার্মেন্ট কর্মী আব্দুল আজিজের নববধূর এক লাখ টাকা দেনমোহর পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) জামায়াতের শেরপুর জেলার নকলা উপজেলা আমির গোলাম সারোয়ার নিহতের স্ত্রী হোসনা বেগমের হাতে বিয়ের কাবিন বাবদ দেনমোহরের এ টাকা তুলে দেন। তিনি উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের মৃত মোজাম্মেল হক মেজোর ছেলে।
এ সময় জামায়াত নেতা আতিক আলম, নারায়ণখোলা কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম ইমরান হোসেন সবুজসহ স্থানীয় নেতরা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াত নেতারা বলেন, শহীদ আব্দুল আজিজ আমাদের জাতীয় সম্পদ। তার কাছে এ জাতির অনেক ঋণ। আমরা বেঁচে থাকতে শহীদ পরিবার ঋণের মধ্যে থাকবেন, দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামী চুপ করে বসে থাকতে পারে না। আমরা আমাদের দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে দূরে থাকতেও পারি না। তাই এই টাকা পরিশোধ করে শহীদকে ঋণ মুক্ত করা হলো।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, জীবিকার তাগিদে আজিজ গাজীপুরের বাসন থানা এলাকায় টেক্সইউরোপ বিডি লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গত ৫ আগস্ট গাজীপুরে তার কর্মস্থলের কাছেই চলে ছাত্র আন্দোলন। এ সময় তিনি তার নিজ মোবাইল দিয়ে ছাত্র আন্দোলনের ভিডিও করছিলেন। এতে পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেট তার গায়ে লাগে। পরে তার এক সহকর্মীর সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ২ দিন চিকিৎসার পর ৭ আগস্ট আজিজের মৃত্যু হয়। পরের দিন ৮ আগস্ট জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে লাশ দাফন করা হয়।
অপরদিকে তার মৃত্যুর এক মাস পূর্বে গত ১ জুলাই আব্দুল আজিজের সঙ্গে পারিবারিকভাবে একই গ্রামের হোসনা বেগম নামে এক তরুণীর বিয়ে হয়। এ সময় এক লাখ টাকা দেনমোহর সাব্যস্ত করে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়। তার লক্ষ্য ছিল আগস্ট মাসের বেতন ভাতা নিয়ে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করবে। কিন্তু তার মৃত্যুতে দেনমোহর পরিশোধ হয় নি। পরে দেনমোহর পরিশোধে উদ্যোগ নেয় উপজেলা জামায়াত।
নকলা উপজেলা জামায়াতের আমির গোলাম সারোয়ার বলেন, স্ত্রী হোসনা বেগমের দেনমোহর ইসলামী শরিয়া মোতাবেক পরিশোধ করার বিধান রয়েছে। তাই শহীদ আব্দুল আজিজের কাবিনের এ দেনমোহর পরিশোধ করে তাকে দায়মুক্ত করা হয়েছে। কারণ আমরা এই শহীদের কাছে ঋণী। শহীদ আজিজ ধার্মিক মানুষ ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল খুব শিগগিরই দেনমোহর পরিশোধের পর স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে আসবেন। মজলুম সাংগঠনিক কর্মী হিসেবে শহীদের স্বপ্নপূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। এই পরিবারের পাশে জামায়াত সব সময় থাকবে।
উল্লেখ্য, এর আগে নিহত আব্দুল আজিজের পরিবারকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা ও জামায়াতে ইসলামীর শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন।