জুলাইয়ের উত্তাল দিনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের বেদম মারধরে মেরুদণ্ড ভেঙে যায় ঢাকা কলেজের সমন্বয়ক আহমেদ জীবনের। আহত হওয়ার কারণ গোপন রেখে তাকে ভর্তি হতে হয়েছিল রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে। তারপরও পোশাক খুলে তাকে চেক করা হয়েছিল তিনি আন্দোলনে আহত রোগী কিনা! এমন বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা আর মেরুদণ্ডে গুরুতর ক্ষত নিয়ে পড়ে আছেন বিছানায়।
ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স মাস্টার্স পাশ করা আহমেদ জীবন। সরকারি চাকরির বয়স শেষের দিকে। তাই কোটা বৈষম্যের দূর করার দাবি নিয়ে নেমেছিলেন রাজপথে। কিন্তু সেই পথের মাঝেই তার মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা।
সমন্বয়ক আহমেদ জীবন বলেন, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে কিছু জুনিয়রদের রক্ষা করতে গিয়ে আমি ঝামেলার মাঝে পড়ে যাই। এক পর্যায়ে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এ সময় পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরা লাথি মারতে থাকে। পরে হাত দিয়ে মাথা রক্ষা করি। কিন্তু তখন তারা পিঠে খুব জোরে আঘাত করতে থাকে। পরে এমআরআই রিপোর্ট আসার পর বুঝতে পারি আমার মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে।
উত্তাল ১৮ জুলাইয়ে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় গুরুতর আহত হওয়ার পর জীবন ভর্তি হয়েছিলেন পঙ্গু হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে গ্রেপ্তার এড়াতে গোপন রাখতে হয়েছে আহত হওয়ার কারণ।
আহমেদ জীবন বলেন, হাসপাতালে বলতে হয়েছে তাড়াহুড়া করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় পরে গেছি। এছাড়া সেখান থেকে বের হয়ে আবার যে কোথাও যাবো সেখান থেকে তারা বেরও হতে দিচ্ছিলো না। কারণ তারা বারবার প্রশ্ন করছিল আমি কিভাবে আহত হয়েছি। কোথায় আহত হয়েছি। একটা স্বাধীন দেশে আমার কাপড় খুলে দেখা হয় শরীরে পুলিশের আঘাতের চিহ্ন আছে কি না বা গুলিবিদ্ধ কি না। যদি এমন কিছু হয় তাহলে তারা আমাকে রিলিজ দেবে না প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া। কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে সেখানে আমাকে দেখার জন্য ৪ দিনের মধ্যে মাত্র একদিন ডাক্তার এসেছিল।
খণ্ডকালীন একটি চাকরি করে চালিয়ে নিতেন বাবা-মায়ের অভাবের সংসার। কিন্তু মেরুদণ্ডে অপারেশনের পর দেড় মাস ধরে পড়ে আছেন বিছানায়। থাকতে হবে আরও প্রায় সাত মাস। নেই পুরোপুরি সুস্থতার নিশ্চয়তাও।
জীবন আরও বলেন, মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালে আমার ট্রিটমেন্ট করাই। সেখানে আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে। কিছু টাকা আমি জোগাড় করেছি। আর বাকিগুলো পরিবার দেনা করে সংগ্রহ করছে। কিন্তু আমার ভবিষ্যত অনিশ্চিত। আমি আর কখনও স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারবো কি না সেটা জানি না।
রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন আহমেদ জীবন। কিন্তু কতদিন চালিয়ে নিতে পারবেন তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।