আপনি কি জানেন, যে কফি খেয়ে আপনি ক্লান্তি দূর করেন, সেই কফি আসলে বিড়াল কিংবা হাতির মল থেকে তৈরি হতে পারে? শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কফির জগতে এমন দুটি অসাধারণ প্রক্রিয়ায় তৈরি কফি রয়েছে, যা শুধু স্বাদে নয় বরং এর উৎপাদন প্রক্রিয়ায়ই লুকিয়ে আছে এক অদ্ভুত পদ্ধতি। এমন দুটি কফি হলো কপি লুয়াক ও ব্ল্যাক আিইভোরি কফি; যা বিশ্বের অন্যতম দামি ও অনন্য কফি হিসেবেও বিবেচিত।
প্রথমে আসি কপি লুয়াকের কথায়। এই কফি ইন্দোনেশিয়ার সিভেট ক্যাট বা খাটাশ বিড়ালের মল থেকে তৈরি হয়। কিন্তু ভাবছেন তা আবার কীভাবে? ইন্দোনেশিয়ার মুসাঙ্গ বা খাটাশ জাতের এই বিড়ালরা মূলত বাগানে পাকা কফি খায়। এই কফি চেরির গায়ে থাকে মিষ্টি মাংসল অংশ, যা বিড়ালদের খুব প্রিয় খাবার। চেরি বীজ, যা আমরা কফি বীজ হিসেবে জানি। তা কিন্তু খাটাশ জাতের বিড়ালের পেটে হজম হতে পারে না। তাই সেটি পেটের ভেতর প্রাকৃতিকভাবে অক্ষত থাকে এবং মল আকারে বেরিয়ে আসে।
এই বীজ খাটাশের পেটের হজম প্রক্রিয়া কফির তিক্ততা কমিয়ে তৈরি করে এক মোলায়েম স্বাদ। আর যখন এই প্রাণি মলত্যাগ করে, তখন সেই মলের মধ্যে থাকা কফি বীজগুলো সংগ্রহ করে একত্র করা হয়। এসব বীজ পরিষ্কার করে সূক্ষ্মভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এই ধাপের পর কফি বীজগুলো শুকিয়ে ভাজা হয়, যা কফির স্বাদকে আরও উন্নত করে। আর এভাবে তৈরি হয় কপি লুয়াক, যা কফিপ্রেমীদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
প্রায় একই প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় ব্ল্যাক আিইভোরি কফি। তবে এটি বিড়াল নয়, মূলত থাইল্যান্ডে হাতির মল থেকে তৈরি হয়। হাতিরা যখন পাকা কফি চেরি খায়, তখন সেই চেরিগুলোও তাদের হজম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। হাতির হজম প্রক্রিয়া কফির প্রোটিন ভেঙে দেয়, যার ফলে কফির তিক্ততা কমে স্বাদ হয় আরও মোলায়েম।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রাণীদের মল থেকে তৈরি এসব কফির দাম এত বেশি কেন? কারণ এই প্রক্রিয়াগুলো অত্যন্ত শ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। কস্তুরি বিড়াল ও হাতির হজম প্রক্রিয়া কফির স্বাদকে এমনভাবে পরিবর্তন করে, যা অন্য কোনো পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। এ ছাড়া,বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সীমিত পরিমাণে এই কফিগুলো তৈরি করা যায়, যার ফলে এর দাম অত্যন্ত বেশি।
ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও কপি লুয়াক এর উৎপাদন হচ্ছে ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে। আর ব্ল্যাক আিইভোরি কফি শুধুমাত্র থাইল্যান্ডে তৈরি হয়। যা বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফির একটি হিসেবে স্বীকৃত। এ কফিগুলো শুধু কফি নয়, বরং একটি অভিজ্ঞতা। কস্তুরি বিড়াল ও হাতির হজম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া প্রতিটি কফির কাপ যেন একেকটি গল্প বলে। পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত ও মূল্যবান কফির মধ্যে এই দুইটি কফি নিশ্চিতভাবেই আপনার কফি অভিজ্ঞতাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে।