স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশের ১১ জেলা। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, পানি কমে তার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এরই মধ্যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে দেশের চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৫১ লাখ মানুষ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার জেলার ৭৭ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত এবং ৫৮৭টি ইউনিয়ন বা পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যায় ১১ জেলায় ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯০১ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩০ জন। মারা গেছেন ১৮ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৫ জন, কুমিল্লার ৪ জন, নোয়াখালীতে ৩ জন, কক্সবাজারে ৩ জন এবং ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুর জেলায় একজন করে মারা গেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পানিবন্দি বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ৫১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট তিন লাখ এক হাজার ৯৯৩ জন মানুষ এবং ২১ হাজার ৬৯৫টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবার জন্য ৭৬৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে বলেও জানায় মন্ত্রণালয়।
গতকাল শনিবার বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীর পানি কমার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীর সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় এবং ভারতের ত্রিপুরায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি কমার প্রবণতা অব্যাহত আছে। ফলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতি শুক্রবার থেকে উন্নতি হচ্ছে এবং অব্যাহত আছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদী-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানেও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা নদী-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে।
খাগড়াছড়ি: দুই দিন ধরে বৃষ্টি বন্ধ থাকায় খাগড়াছড়ির চেঙ্গী, ফেনী নদীর পানি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। কমছে মাইনী নদীর পানি। তবে খাগড়াছড়ির মেরং ইউনিয়নে কয়েকশত পরিবার এখনো পানিবন্দি হয়ে আছেন। জেলার দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের সোবাহানপুর, হাজাছড়া, ২ নম্বর কলোনি, ৩ নম্বর কলোনি, বড় মেরুং, ছোট মেরং বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পানিবন্দিদের এমন চিত্র।
ফেনী: ফেনীর পরশুরাম, ছাগলনাইয়াতে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমছে। তবে এই দুই উপজেলার পানি কমলেও জেলা শহরের সর্বত্র প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ছাড়াও ফেনী পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডেই বন্যার পানিতে ঢুকেছে। ফেনী জেলা প্রশাসন এসব নিশ্চিত করেছে। এদিকে বন্যার্তদের জন্য রেলওয়ের উদ্যোগে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারী ট্রেন।
মুন্সীগঞ্জ: ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া পয়েন্টে মেঘনা নদীর পানি বেড়েছে। গজারিয়ায় মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে জেলার ধলেশ্বরী নদীর রিকাবিবাজার, পদ্মা নদীর ভাগ্যকূল ও মাওয়া পয়েন্টে পানি রয়েছে বিপৎসীমার নিচে।